গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা খাতে শুধু সরকার নয়, সবার এগিয়ে আসা দরকার। ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুল মালিকের সৎ প্রচেষ্টার অনন্য-অসাধারণ প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষ সুদূরপ্রসারীভাবে উপকৃত হচ্ছে। সে জন্য সমাজে যাঁরা বিত্তবান, তাঁরাও এগিয়ে আসুন। আর্থিক সম্পত্তি না থাকলেও যাঁদের হৃদয়ের সম্পদ অনেক বড় তাঁদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’
গতকাল শুক্রবার এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী এসব কথা বলেন। রাজধানীর মিরপুরে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট অডিটরিয়ামে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস উপলক্ষে হাইপারটেনশন কমিটি অব ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এ সেমিনারের আয়োজন করে।
চিকিৎসা খাতে বাংলাদেশের ইতিহাসে যুগান্তকারী ভূমিকা শেখ হাসিনা সরকার রেখেছে উল্লেখ করে গৃহায়ণমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছেন, প্রতিটি বিভাগে একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। প্রতিটি জেলায় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। এর লক্ষ্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে দক্ষ মানুষ তৈরি করা এবং নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। কোনো সরকারই এতটা সংবেদনশীলতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতি নজর দেয়নি।’
অযোগ্য মানুষকে বিশেষায়িত জায়গায় বসানো যাবে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, একজন যথাযথ যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ চিকিৎসক না হয়ে অযোগ্য মানুষ চিকিৎসক হলে যে সর্বনাশ হয়, তা থেকে পেছনে ফিরে আসা যায় না।
মানুষকে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করা যায় উল্লেখ করে চিকিৎসকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘নীতি-নৈতিকতার কথা মানুষকে শিক্ষা দিতে হবে। অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে চাপ বেড়ে গিয়ে উচ্চ রক্তচাপে মানুষ আক্তান্ত হয়। স্বস্তির সঙ্গে থাকার জন্য কিছু ফর্মুলা দরকার। সেই ফর্মুলাটা চিকিৎসকেরা দিতে পারেন। সব সময় অপারেশন বা ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা না–ও হতে পারে। নৈতিকতা ও মূল্যবোধকে আপনাদের চিকিৎসা বিজ্ঞানের অংশে পরিণত করে বৃহৎ পরিসরে এর অনুশীলন করা দরকার। অনেক গুণগত ভূমিকা জাতির জন্য আপনারা রাখছেন এবং রাখতে পারেন।’
গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও পারিবারিক শিক্ষার প্রতি অভিভাবকদের দৃষ্টি দিতে হবে। এ রাষ্ট্র অনেক ত্যাগের বিনিময়ে সৃষ্টি একটি রাষ্ট্র। এ রাষ্ট্রের জন্য আমাদের পূর্বপুরুষেরা অনেক পরিশ্রম করেছেন। তাঁদের স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য আমাদের নতুন প্রজন্মকে আধুনিক, গুণগত, মানবিকতাসম্পন্ন ভালো মানুষ করার জন্য চিকিৎসার পাশাপাশি মনোজাগতিক চিকিৎসা দরকার।’ তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকার গণমানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য অবিরাম কাজ করে চলেছেন। শুধু সরকারি খাত নয়, বেসরকারি খাত থেকেও আপনারা সবাই এগিয়ে আসুন। চিকিৎসকদের পেশা যাতে কোনোভাবে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সে জন্য চিকিৎসার পাশাপাশি মনোজাগতিক চিকিৎসাকে আরও বেশি সম্প্রসারিত করতে হবে।’
রক্তচাপ এবং উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগসমূহ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানানো, প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসার জন্য জনগণ, চিকিৎসকসহ সবার মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছর ১৭ মে বিশ্বব্যাপী ‘বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস’ পালিত হয়ে থাকে। ওয়ার্ল্ড হাইপারটেনশন লিগ এবং ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব হাইপারটেনশনের যৌথ উদ্যোগে প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও হাইপারটেনশন কমিটি অব ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ শুক্রবার বিভিন্ন আয়োজনে দিবসটি পালন করেছে। বিশ্ব রক্তচাপ দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘আপনার রক্তচাপ জানুন’।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুল মালিকের সভাপতিত্বে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. বার্দান জং রানা, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সহসভাপতি বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক খন্দকার আবদুল আউয়াল রিজভী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাইপারটেনশন কমিটি অব ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।