ভবনের প্রতি তলায় গিয়ে কেক কাটলেন, সহকর্মীদের সঙ্গে গল্প-হাসিতে মাতলেন, জন্মদিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন প্রথম আলো সম্পাদকসহ জ্যেষ্ঠ কর্মীরা। এই ফাঁকে সহকর্মীদের কেউ কেউ ছবি ও সেলফি তুলতে ভুললেন না। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করা হয়।
আজ ৪ নভেম্বর, বুধবার প্রথম আলোর ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এবার প্রথম আলো পরিবার দিনটি উদ্যাপন করে একটু ভিন্নভাবে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এবার কর্মী সমাবেশ বাতিল করা হয়। এর বদলে কর্মীদের জন্য আয়োজন করা হয়েছে জুম আলোচনা ও অনলাইনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিশেষ অনুষ্ঠান।
এবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সহকর্মীদের জন্য ছিল নতুন একটি চমক। গতকালই প্রথম আলোর সব কর্মীর বাসায় পৌঁছে যায় সম্পাদকের পক্ষ থেকে পাঠানো বিশেষ উপহার। তাতে ছিল ‘সহযাত্রী’ লেখা স্মারক, কৃতজ্ঞতার চিঠি, টি–শার্ট, খাবারদাবার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্কসহ নানা কিছু।
এদিকে রাজধানীর বাইরে ৬৩টি জেলার স্থানীয় জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় প্রথম আলো বন্ধুসভা। পাশাপাশি করোনার সময়ে দায়িত্ব পালনের জন্য এসব কর্তৃপক্ষকে প্রথম আলোর সম্পাদকের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতার চিঠিও দেওয়া হয়।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রথম আলোর কর্মীরা আজ সকালে কারওয়ানবাজারে কর্মস্থলে চলে আসেন। পুরুষ সহকর্মীরা পরেন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর টি-শার্ট আর নারী সহকর্মীরা পরে আসেন লাল পাড়ের মেরুন শাড়ি। আজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনটি শুরু হয় কেক কাটার মধ্য দিয়ে। তবে বড় একটি কেক নয়, এবার সব মিলিয়ে কাটা হয়েছে মোট নয়টি কেক।
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে প্রথম আলোর সম্পাদক পর্যায়ক্রমে কারওয়ান বাজারের প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবনে প্রথম আলো কার্যালয় ও পাশের প্রথম আলোর নিজস্ব ভবনের প্রতিটি তলায় আসেন। সম্পাদক মতিউর রহমানের সঙ্গে ছিলেন ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ, সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক ও ফিচার সম্পাদক সুমনা শারমীন। ছিলেন প্রশাসন ও মানবসম্পদ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। তাঁরা সহকর্মীদের সঙ্গে গল্প করেন, খোঁজখবর নেন, করোনা পরিস্থিতিতে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো কাজ করার অনুপ্রেরণা দেন।
সম্পাদকসহ জ্যেষ্ঠ কর্মীরা প্রথমেই চলে যান প্রগতি ভবনের ১৩ তলায় থাকা প্রথম আলোর ফিচার, ফটোগ্রাফি, গ্রাফিকস, সম্পাদনা সহকারী, ইংলিশ অনলাইন বিভাগে।
সেখানে একটি কেক কাটা হয়। এরপর জ্যেষ্ঠ কর্মীরা আসেন ১২ তলার বার্তাকক্ষে। বার্তা বিভাগের সব সহকর্মীকে ডেকে আনা হয়। এ সময় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান সবার উদ্দেশে বলেন, ‘সবাই ভালো থাকেন, সুস্থ থাকেন এবং বর্ণাঢ্য থাকেন।’
বিশেষ বার্তা সম্পাদক শওকত হোসেন বলেন, ‘আমরা আগামীতেও ভালো কাজ করব, প্রথম আলোকে আরও এগিয়ে নেব। এটাই চাওয়া।’ রিপোর্টিং বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক শেখ সাবিহা আলম বলেন, এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর স্লোগান ‘আস্থা রাখি আলোয়’। সেই আস্থা যেন সব সময় থাকে—এটাই কামনা।
এরপর ১১ তলায় স্টুডিও, কনটেন্ট টিম, আইটি, ভিডিও এবং উত্তর আমেরিকা বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহকর্মীরা কেক কাটেন।
অষ্টম তলায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ কর্মীদের হাততালি দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। একসঙ্গে কেক কাটার পাশাপাশি প্রশাসন বিভাগের প্রধান উৎপল কুমার চক্রবর্তী উপস্থিত সহকর্মীদের ধন্যবাদ জানান। প্রথম আলোর গ্রন্থাগার ও অভিলেখাগার বিভাগের উপদেষ্টা লুৎফুল হক বলেন, দীর্ঘ ২২ বছর পাড়ি দিয়েছে প্রথম আলো। আরও এগিয়ে যাবে ভবিষ্যতে।
এ সময় সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ, প্রশাসন, লাইব্রেরি বিভাগের অনেক গুরুত্ব আছে। প্রতিষ্ঠানের অগ্রযাত্রায় এসব বিভাগের অবদান যে গুরুত্বপূর্ণ, তা কর্মীরা প্রমাণ করেছেন।
সপ্তম তলায় আছে সম্পাদকীয়, কিশোর আলো, বিজ্ঞানচিন্তা, চলতি ঘটনা ও প্রথম আলো ট্রাস্ট। জ্যেষ্ঠ কর্মীরা এই তলায় এসে পৌঁছালে সবাই মিলে কেক কাটা হয়। এ সময় কিশোর আলো সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, ‘আমাদের কাগজ ভবিষ্যতে আরও ভালো হবে, এটাই আশা।’ যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, ‘২২তম বার্ষিকীতে আমাদের চাওয়া, আরও ২২ বছর যেন আমরা সম্পাদকের সঙ্গে কাজ করতে পারি।’
এরপর দ্বিতীয় তলায় প্রথম আলোর ডিজিটাল টিমের কর্মীদের সঙ্গে সময় কাটান জ্যেষ্ঠ কর্মীরা। এ সময় সম্পাদক বলেন, এখন সময় ডিজিটালের। প্রথম আলোর সব বিভাগই ভালো কাজ করে। তবে ডিজিটাল টিম একটু বেশি ভালো কাজ করছে।
এরপর প্রগতি ভবন লাগোয়া প্রথম আলোর কার্যালয়েও যান সম্পাদকসহ জ্যেষ্ঠ কর্মীরা। সেখানে একে একে বিজ্ঞাপন, হিসাব, সার্কুলেশন, ইভেন্ট, বিজ্ঞাপন কাস্টমার কেয়ার ও সাপোর্ট টিম এবং টেলিফোন অপারেটর বিভাগে গিয়ে কথা বলেন, খোঁজ নেন, ছবি তোলেন ও কেক কাটেন। করোনা পরিস্থিতির সময়ে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করায় এসব বিভাগের কর্মীদের কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।
এ সময় প্রথম আলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাপক মো. সাজ্জাদুল কবির জানান, করোনাকালে প্রশাসন বিভাগের সহায়তায় কাজ চালিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে প্রথম আলোর একজন নিরাপত্তাকর্মীও এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হননি।
টেলিফোন অপারেটরদের উদ্দেশে প্রথম আলোর উপসম্পাদক লাজ্জাত এনাব মহছি বলেন, সব সময় অপারেটরদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়। কিন্তু কর্মীদের অনেকেই তাঁদের চেনেন না, তাঁরাও অন্য বিভাগের কর্মীদের ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না। অথচ দিনরাত কথা বলে তাঁদের কণ্ঠগুলো সবার চেনা।
সহকর্মীদের সঙ্গে শারীরিক দূরত্ব মেনে সেলফি তোলা ও কেক কাটার মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের একটি পর্ব।