রাজধানীর উত্তরখানে আগুন লাগার ঘটনায় স্বামীর পর এবার মারা গেলেন মুসলিমা (২০)। আজ শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) তাঁর মৃত্যু হয়। এর আগে সকাল ১০টার দিকে মারা যান তাঁর স্বামী মো. আজিজুল হক। এ ঘটনায় দগ্ধ অবস্থায় আছে ছয়জন।
শনিবার ভোররাত চারটার দিকে উত্তরখানের ব্যাপারীপাড়া এলাকায় হেলাল মার্কেটের কাছে তিন তলা ভবনের একটি ফ্ল্যাটে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। গ্যাসের চুলা থেকে অথবা গ্যাসের লাইন ছিদ্র হয়ে ওই আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হতাহত লোকজনের সবাই ওই ফ্ল্যাটে সাবলেট হিসেবে বসবাসরত তিন পরিবারের সদস্য। মারা যাওয়া মুসলিমার বাবার বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার বাগপাড়ায়। আর তাঁর শ্বশুরবাড়ি পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার গোবিন্দপুর এলাকায়।
মুসলিমা ও আজিজুলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢামেকের বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ সংকর পাল প্রথম আলোকে বলেন, দগ্ধ বাকিদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। প্রত্যেকের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। শিশুটিসহ দুজন কম দগ্ধ হলেও শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ায় তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তাঁর মতে, আগুন খুব দ্রুত সবার গায়ে ধরে গিয়েছিল।
দগ্ধ অন্য ছয় ঢামেকের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে সাগরের (২২) ৬৬ শতাংশ, ডাবলুর (৩৩) ৬৫ শতাংশ, সুফিয়ার (৫০) ৯৯ শতাংশ, পূর্ণিমার (৩৫) ৮০ শতাংশ, আবদুল্লাহর (৫) ১২ শতাংশ ও আঞ্জুর (২৫) শরীরের ৬ শতাংশ পুড়ে গেছে। হতাহত ব্যক্তিদের পরিবার স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত।
উত্তরখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, অসাবধানতার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। রাতের বেলায় বাড়িটির চুলায় গ্যাস ছিল না। অসতর্ক অবস্থায় চুলার সুইচ বন্ধ না করেই তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েন। চুলায় গ্যাস আসার পর দরজা-জানালা বন্ধ থাকায় গ্যাস বের হওয়ার পথ পায়নি। অন্যদিনের মতো ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা ভোরে রান্না করতে উঠে আগুন জ্বালানোমাত্র চারপাশে আগুন ধরে যায়। ফ্ল্যাটে যে কজন ছিলেন, সবাই দগ্ধ হয়েছেন।
বাড়িওয়ালা মেহেদি হাসান প্রথম আলোকে বলেছেন, দেড় বছর আগে ওই তিন পরিবার ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়। সবাই গার্মেন্টসে কাজ করেন। তিনি জানান, আগুনে বাড়ির কাঠামোগত ক্ষতি কম হয়েছে।
উত্তরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। তিনতলা ভবনের নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে আগুন লাগে। ফ্ল্যাটে তিনটি ছোট কক্ষ ও একটি রান্নাঘর। রান্নাঘরের চুলা থেকেই আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন তিন পরিবারের আটজনকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
মো. সফিকুল ইসলাম আরও বলেন, গ্যাসের চুলা বন্ধ না রাখায়, নাকি গ্যাসের পাইপলাইনে ছিদ্র থাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।