সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোর ট্রাকচালক মো. শাহাজাহান গতকাল শনিবার রাত নয়টার দিকে তাঁর স্ত্রী রেশমি আক্তারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেছিলেন।
শাহাজাহান বলেছিলেন, কাজ শেষে তিনি শিগগির বাসায় ফিরবেন। কোনো বাজারসদাই লাগবে কি না, সে কথাও স্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন তিনি।
স্ত্রী রেশমির সঙ্গে এ–ই ছিল শাহাজাহানের শেষ কথা। তারপরই ডিপোতে ঘটে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। বিস্ফোরণের পর আগুন। তখন থেকে শাহাজাহানের ফোন বন্ধ।
শাহাজাহানের ফোন বন্ধ পেয়ে স্বামীর খোঁজে দুই সন্তান নিয়ে বেরিয়ে পড়েন রেশমি। এক সন্তানের বয়স ২ বছর, আরেকজনের ৫ বছর।
শাহাজাহানের কোনো খোঁজ না পেয়ে রেশমি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। এক ওয়ার্ড থেকে আরেক ওয়ার্ডে ছুটে বেড়ান।
শাহাজাহানের খোঁজে রেশমির সঙ্গে তাঁর শ্বশুর মোহাম্মদ কালুও আছেন। কোনো অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালে এলেই কালু ও রেশমি হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। কিন্তু কোনো গাড়িতেই দেখা মিলছে না শাহাজাহানের।
এখন স্বামীর অপেক্ষায় রয়েছেন রেশমি। ছেলের অপেক্ষায় আছেন বাবা কালু। বাবার অপেক্ষায় আছে শাহাজাহানের শিশুসন্তানেরা। এই পরিবারের সদস্যদের অপেক্ষা ফুরাচ্ছে না।
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুনঃ
রাতভর বোনজামাইকে খুঁজেছেন মোহাম্মদ আলী
মালিকপক্ষ আসেনি, কী কেমিক্যাল জানতে পারছে না উদ্ধারকারীরা
বিস্ফোরণে আহতরা বললেন, নতুন জীবন পেলাম
মোহাম্মদ কালু জানান, তাঁদের বাড়ি ফটিকছড়ি উপজেলায়। তাঁর ছেলে শাহাজাহান বছর চারেক ধরে এই ডিপোতে কাজ করছেন। গতকাল রাত নয়টার দিকে শাহাজাহানের সঙ্গে পরিবারের কথা হয়। তার পর থেকে তাঁর মুঠোফোন ফোন বন্ধ রয়েছে।
রেশমি বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে আমার স্বামীকে জীবিত অবস্থায় ফিরে পেতে চাই। গতকাল রাত থেকে দুর্বিষহ সময় পার করছি। সব জায়গায় খোঁজ করেছি। কিন্তু কোথাও তাকে পাইনি। আমার বড় সন্তান বাবার জন্য আকুল হয়ে আছে।’
গতকাল রাতে সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের পর ডিপোতে আগুন ধরে যায়। এ ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৩৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত দেড় শতাধিক।
ডিপোর আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এ অবস্থায় আগুন নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধার তৎপরতায় সহযোগিতার কাজে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসংলগ্ন সীতাকুণ্ডের শীতলপুর এলাকায় ডিপোটি অবস্থিত।
ডিপোতে ‘হাইড্রোজেন পারক্সাইড’ নামের বিপুল দাহ্য রাসায়নিক ছিল বলে জানা গেছে। হাইড্রোজেন পারক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ। যদি উত্তপ্ত করা হয়, তাহলে তাপীয় বিয়োজনে হাইড্রোজেন পারক্সাইড বিস্ফোরক হিসেবে আচরণ করে।
ডিপোটি চালু হয় ২০১১ সালের মে মাসে। নেদারল্যান্ডস ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে এই ডিপো চালু হয়।