ওরা কথা বলতে ও শুনতে পারে না। বয়স ১৫ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। মানসিকভাবেও ভারসাম্যহীন। তবে স্বপ্ন বোনে সবাই। স্বপ্ন দেখে বিশ্বজয়ের। আর সেই স্বপ্ন নিয়েই আবুধাবিতে আসন্ন ‘স্পেশাল অলিম্পিকস ওয়ার্ল্ড সামার গেমসে’ অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে পাবনার ১৫ জন বাক্ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী।
স্পেশাল অলিম্পিকস বাংলাদেশ সাব-চ্যাপ্টার পাবনা জেলা শাখার উদ্যোগে গত রোববার বিকেলে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাদের প্রস্তুত করা হচ্ছে প্রতিযোগিতায় লড়ার জন্য।
শহরের শহীদ আমিন উদ্দিন স্টেডিয়ামের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পাবনা-৫ আসনের সাংসদ গোলাম ফারুক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পাবনার জেলা প্রশাসক ও স্পেশাল অলিম্পিকস বাংলাদেশ সাব-চ্যাপ্টার পাবনার সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। অনুষ্ঠানে এই কিশোর-কিশোরীদের ফুল দিয়ে সংবর্ধনা ও বিভিন্ন উপহার দেওয়া হয়।
আয়োজকেরা জানান, আগামী ১৪ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে স্পেশাল অলিম্পিকস ওয়ার্ল্ড সামার গেমস। গেমসের ৬টি ইভেন্টে অংশগ্রহণের জন্য ১৫ জন বাক্, শ্রবণ ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কিশোর-কিশোরীকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে জেলা সদরের দাপুনিয়া গ্রামের স্বপ্না খাতুন, সিংগা সরদারপাড়া গ্রামের চাঁদনী খাতুন, জেলা শহরের ময়নামতি এলাকার কনক খাতুন, জালালপুর গ্রামের অনিতা খাতুন, আতাইকুলা ইউনিয়নের কুচিয়ামারা গ্রামের ফাবিয়া খাতুন ও আটঘরিয়া উপজেলার দেবোত্তর গ্রামের তামান্না খাতুন হ্যান্ডবল খেলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
অন্যদের মধ্যে কৃষ্ণপুর গ্রামের আরিফ আরমান, গোবিন্দা মহল্লার ওয়াদুদ কবির, টিকরী গ্রামের যূথী খাতুন ও জালালপুর জোদগৌড়ী গ্রামের খুশি খাতুন সাঁতার প্রতিযোগিতা, পৈলানপুর মহল্লার আকাশ ও রাখালগাছি গ্রামের রাব্বী আহম্মেদ ফুটবল, টিকরী গ্রামের বৃষ্টি খাতুন টেবিল টেনিস, শালগাড়িয়া মহল্লার রাজীব সরদার বাস্কেটবল ও জালালপুর গ্রামের সাদিয়া খান অ্যাথলেটিকসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। জেলার বিভিন্ন প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় থেকে প্রতিভা অনুযায়ী এই ১৫ জনকে বাছাই করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
স্পেশাল অলিম্পিকস বাংলাদেশ সাব-চ্যাপ্টার পাবনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হোসেন বলেন, মানসিক ও শারীরিক বিভিন্নভাবে তারা প্রতিবন্ধী হলেও সবার দৃঢ় মনোবল আছে। বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখছে সবাই। প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে ১৯ জানুয়ারি সবাইকে ঢাকার বিকেএসপিসহ বিভিন্ন জায়গায় উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ১২ মার্চ তারা আবুধাবির দিকে রওনা দেবে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাংসদ গোলাম ফারুক বলেন, ‘ওদের চোখেমুখে স্বপ্নজয়ের আশা জ্বলজ্বল করছে। আমরাও আশাবাদী যে দেশের জন্য তারা সম্মান বয়ে আনবে।’
জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা আমাদের সবটুকু সামর্থ্য দিয়ে তাদের প্রস্তুত করার চেষ্টা করছি। তারাও কঠোর পরিশ্রম করে প্রস্তুতি নিচ্ছে। আশা করছি প্রত্যেকেই ভালো করবে।’