বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের (বিএইসি) চেয়ারম্যান মো. আলী জুলকারনাইন গতকাল শনিবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বলেছেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ‘স্পেন্ট ফুয়েল’ রাশিয়া ফেরত নেবে। আর নিম্ন ও মধ্যম মাত্রার তেজস্ক্রিয় বর্জ্য প্রকল্পের পুরো আয়ুষ্কালজুড়ে সংরক্ষণের ব্যবস্থা রূপপুরেই থাকবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলেছে, স্পেন্ট ফুয়েল ফেরত নেওয়া মানে অতিমাত্রায় তেজস্ক্রিয় পারমাণবিক বর্জ্য ফেরত নেওয়া নয়। আসল বিষয় হচ্ছে পারমাণবিক বর্জ্য ফেরত নেওয়া। সেটা রাশিয়া নেবে কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়।
মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে ২০১১ সালে সই হওয়া সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) রাশিয়া ‘স্পেন্ট ফুয়েল’ ফেরত নেবে বলে সুস্পষ্ট উল্লেখ ছিল। কিন্তু ২০১৫ সালে সই হওয়া চূড়ান্ত চুক্তিতে (জেনারেল কন্ট্রাক্ট) বিষয়টি সেভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
এ ব্যাপারে রাশিয়ার বক্তব্য অনুযায়ী, স্পেন্ট ফুয়েল ফেরত নেওয়ার অর্থ হলো তা ফেরত নিয়ে পরিশোধন করে পাওয়া পুনরায় ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি ও অবশিষ্ট অতিমাত্রায় তেজস্ক্রিয় পারমাণবিক বর্জ্য আবার বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দেওয়া। এ কাজটি তাঁরা করবেন চুক্তিবদ্ধ অর্থের বিনিময়ে। আর পারমাণবিক বর্জ্য ফেরত নেওয়ার অর্থ হচ্ছে স্পেন্ট ফুয়েল পরিশোধন করে তা থেকে পাওয়া ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি ফেরত দিয়ে অবশিষ্ট বর্জ্য
রেখে দেওয়া। রাশিয়ার বিদ্যমান আইন আনুযায়ী সেটা তাঁরা করতে পারেন না। তাই তেমন কোনো কথা তাঁরা কখনো বলেনওনি। এমন কোনো চুক্তিও তাঁরা এখন পর্যন্ত সই করেননি।
গতকাল সকালে বুয়েটের পুরকৌশল ভবনের সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিএইসি চেয়ারম্যান বলেন, রূপপুর প্রকল্প পরিচালনায় প্রশিক্ষিত জনবল গড়ে তোলার জন্য রাশিয়া ও ভারতের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। ভারতে এখন পর্যন্ত ৫০ জন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। আরও ৩০ জন অপেক্ষমাণ আছেন। রাশিয়ায়ও জনবল তৈরির কাজ চলছে। এ ছাড়া রূপপুর কেন্দ্র পরিচালনার জন্য রাশিয়ার বিশেষজ্ঞ জনবলও থাকবে।
সেমিনারে বিএইসি চেয়ারম্যান বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের শুরু থেকে বর্তমান পর্যায় পর্যন্ত প্রযুক্তির উন্নয়ন, এখন পর্যন্ত সংঘটিত প্রধান প্রধান পারমাণবিক দুর্ঘটনা, রূপপুর কেন্দ্রের প্রযুক্তি ও নিরাপত্তাব্যবস্থা প্রভৃতি বিষয় উপস্থাপন করেন।
সেমিনারে বুয়েটের অধ্যাপক বদিউজ্জামান বলেন, রূপপুর প্রকল্পের শুরুর দিকে তিনিসহ কয়েকজনের একটি দল কিছু সমীক্ষার কাজ করেছিলেন। ততে একই কাজ তাঁদের তিনবার করতে হয়েছে। কারণ, ভাষাগত সমস্যার কারণে রাশিয়ানরা প্রকৃতপক্ষে কী চায় তা তাঁরা বুঝতে পারেননি। আবার তাঁরা কী করছেন, তাও রাশিয়ানদের বোঝানো যায়নি।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপজ্জনক তেজস্ক্রিয় বর্জ্য রাশিয়া ফেরত নেবে কি না, সে বিষয়ে আলোচনা আপাতত স্থগিত আছে। এখন তৈরি করা হচ্ছে প্রকল্পের অর্থব্যয়ের সূচি (ফিন্যান্সিয়াল ক্যালেন্ডার)।