দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যকলার এ মসজিদের মাঝখানে একটি বড় গম্বুজ আছে। এই গম্বুজ ঘিরে আছে ছোট-বড় আরও ১০টি মিনার। এর মধ্যে চার কোনায় চারটি মিনার রয়েছে।
শেরপুর জেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ঘাগড়ালস্কর গ্রামে গেলে দেখা মিলবে ঐতিহাসিক ঘাগড়ালস্কর খান মসজিদ। চুন-সুরকিতে নির্মিত এ মসজিদের ভেতরে ঢুকলে মনে হবে, আপনি ফিরে গেছেন ২০০ বছর আগের প্রাচীন বাংলায়।
মসজিদের মূল দরজার ওপর খোদাই করা ফলকে আরবি ভাষায় এর প্রতিষ্ঠাকাল উল্লেখ করা হয়েছে হিজরি ১২২৮ বা খ্রিষ্টীয় ১৮০৮ সাল; অর্থাৎ এ মসজিদের বয়স প্রায় ২০০ বছর। প্রাচীন স্থাপত্যকলার এক অনন্যনিদর্শন এ ঘাগড়ালস্কর খান মসজিদ। যদিও স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে মসজিদটি খানবাড়ি মসজিদ নামেই বেশি পরিচিত। এক গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ উভয় দিকেই রয়েছে ৩০ ফুট। আকারে ছোট হলেও, ইতিহাস আর শৈল্পিকতার বিচারে মসজিদটি বেশ গুরুত্ব বহন করে।
২০০২ সাল থেকে ঘাগড়ালস্কর খান মসজিদটি জাতীয় জাদুঘর ও প্রত্নতত্ত্ব¡বিভাগের অধীনে রয়েছে। মসজিদে পাওয়া নিদর্শনগুলো অনুসারে ধারণা করা হয়, বক্সার বিদ্রোহীদের নেতা হিরোঙ্গি খাঁর বিদ্রোহের সময় এ মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যকলার এ মসজিদের মাঝখানে একটি বড় গম্বুজ আছে। এই গম্বুজ ঘিরে আছে ছোট-বড় আরও ১০টি মিনার। এর মধ্যে চার কোনায় চারটি মিনার রয়েছে। মসজিদের ভেতরের মেহরাব আর দেয়ালে অঙ্কিত রয়েছে ফুল ও ফুলদানির কারুকাজ। দেয়ালগুলো ৪ ফুট চওড়া। মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে রয়েছে দুটি জানালা। তবে মসজিদজুড়ে দরজা আছে মাত্র একটি।
মসজিদের ভেতরে ইমাম ছাড়া তিনটি কাতারে ১২ জন করে মোট ৩৬ জন একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে মসজিদের বাইরেও একটি খোলা অংশ আছে। সেখানে আরও ৫০ জন দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে পারেন।
তৎকালীন খানবাড়ির কর্তা আজিমোল্লাহ খান, তাঁর পরিবারের জমিসহ স্থানীয় ব্যক্তিরা মসজিদের জন্য জমি দান করেছেন। মোট ৫৮ শতক জমির ওপর মসজিদটি গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে মসজিদের মূল ভবন ও বাইরের অংশ মিলিয়ে রয়েছে ১৭ শতক জমি। বাকি ৪১ শতক জমির ওপর রয়েছে কবরস্থান।
উপজেলার তেঁতুলতলা গ্রামের স্কুলশিক্ষক আলমগীর হোসেন বলেন, প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ প্রাচীন এ মসজিদ দেখতে আসেন। মসজিদটি একনজর ঘুরে দেখে অনেকে নামাজও আদায় করেন। বিশেষ করে শুক্রবার অনেক মুসল্লি এখানে জুমার নামাজ আদায় করতে আসেন।
বর্তমানে ১৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটির মাধ্যমে মসজিদটি পরিচালিত হয়। মসজিদ কমিটির বর্তমান সভাপতি মো. আফজাল হোসেন খান। সরকারের জাতীয় জাদুঘর ও প্রত্নতত্ত্ব¡বিভাগ মসজিদটির দায়িত্ব গ্রহণ করার পর মসজিদ দেখভালের জন্য একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিন বছর আগে নিয়োগপ্রাপ্ত ওই ব্যক্তি অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন। এর পর থেকেই পদটি শূন্য হয়ে আছে।
আফজাল হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, মসজিদের নামে দুটি পুকুর আছে। পুকুর দুটি ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকায় তিন বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে। তবে ইজারার টাকা দিয়ে মসজিদের ইমামের বেতনসহ অন্যান্য ব্যয় মেটাতে গিয়ে মসজিদ কমিটিকে হিমশিম খেতে হয়। সরকার থেকেও কোনো অর্থসহায়তা দেওয়া হয় না। তাই কমিটির সদস্যদের দেওয়া চাঁদার মাধ্যমে খরচের টাকা মেটানো হয়।
মসজিদের প্রয়োজনীয় সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ অনুদানের জন্য সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রতি আহ্বান জানান আফজাল হোসেন।
ঝিনাইগাতী উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম এ ওয়ারেজ নাইম প্রথম আলোকে বলেন, ঘাগড়ালস্কর খান মসজিদটি পুরো শেরপুর জেলার ঐতিহ্য বহন করছে। এটি দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে অনেক পর্যটক আসেন। তাই মসজিদটি সংস্কার করে আরও দৃষ্টিনন্দন করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন মহলকে জানানো হয়েছে।
যেভাবে যাবেন: শেরপুর শহরের যেকোনো জায়গা থেকে ব্যাটারিচালিত অথবা সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে ঘাগড়ালস্কর খান মসজিদে যেতে পারবেন। অটোরিকশায় জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। চাইলে ৩০০ টাকায় পুরো অটোরিকশা রিজার্ভও নিতে পারবেন।