বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে ১০ বছর আগে কোনো মামলা ছিল না। কিন্তু এখন তাঁর বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ৪৬। এই ১০ বছরে আড়াই গুণ সম্পদ বেড়েছে তাঁর স্ত্রীর।
মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে ১০ বছরে দায়ের হওয়া মামলাগুলো নাশকতা, বিস্ফোরণ, ভাঙচুর, সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে। ৪৬ মামলার মধ্যে ১৬টি চলমান রয়েছে। ১০টি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। ২০টি মামলা স্থগিত করেছেন আদালত। ২০১৩ সালে সর্বাধিক ১৩টি এবং ২০১২ সালে ১২টি মামলা হয়েছে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় এসব তথ্য উল্লেখ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বগুড়া-৬ (সদর) ও ঠাকুরগাঁও-১ (সদর) আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন তিনি। ২০০৮ সালের হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে, ওই সময় তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না। কিন্তু এবার হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি, সন্ত্রাস নিরোধ আইন, বিস্ফোরক দ্রব্য আইন, দ্রুত বিচার আইনসহ বিভিন্ন ধারায় ৪৬টি মামলা হয়েছে। তিনটি মামলা হয়েছে তাঁর নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে। অন্য সব মামলা করা হয়েছে ঢাকায়।
এদিকে গত ১০ বছরে স্ত্রী রাহাত আরা বেগমের অস্থাবর সম্পদ প্রায় আড়াই গুণ বেড়েছে বলে উল্লেখ করেছেন মির্জা ফখরুল। সম্পদ বেড়ে যাওয়ায় স্বামীর চেয়েও বেশি সম্পদশালী হয়েছেন স্ত্রী। ২০০৮ সালের হলফনামায় রাহাত আরার অস্থাবর সম্পত্তি দেখানো হয়েছিল ২৩ লাখ ২২ হাজার ২৩২ টাকার। এবার দেখানো হয়েছে ৬৩ লাখ ৩৬ হাজার ৩২২ টাকা। ২০০৮ সালে মির্জা ফখরুলের অস্থাবর সম্পদ ছিল ৩৯ লাখ ৭ হাজার ১৯০ টাকার। এবার দেখানো হয়েছে ৪৪ লাখ ৬১ হাজার ৪৪৫ হাজার টাকা।
২০০৮ সালের হলফনামায় নিজের কোনো গাড়ির কথা উল্লেখ না থাকলেও এবার স্ত্রীর কাছ থেকে উপহার পাওয়া একটি ব্যক্তিগত গাড়ির কথা উল্লেখ করেছেন ফখরুল। তবে এর মূল্য উল্লেখ করা হয়নি।
১০ বছর আগে হলফনামায় ব্যাংকঋণের টাকায় কেনা স্ত্রী রাহাত আরার ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের একটি গাড়ি থাকার কথা উল্লেখ করেছিলেন ফখরুল। এবারের হলফনামায় তাঁর স্ত্রীর ১৭ লাখ ৫৮ হাজার ১৪০ টাকা মূল্যের একটি গাড়ি থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে। ১০ বছরে রাহাত আরার কোনো স্থাবর সম্পদ বাড়েনি। উল্টো বেড়েছে ফখরুলের স্থাবর সম্পদ। ২০০৮ ও ২০১৮ সালের হলফনামায় রাহাত আরার স্থাবর সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ২৯ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। ২০০৮ সালের হলফনামায় ফখরুলের স্থাবর সম্পদ ১৭ লাখ ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা উল্লেখ ছিল। এবারের হলফনামায় তাঁর স্থাবর সম্পদের মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে ২২ লাখ ১১ হাজার ৯১৬ টাকা।
১০ বছরে ঋণ কমেছে বিএনপির কেন্দ্রীয় এই মহাসচিবের। ২০০৮ সালের হলফনামায় তিনি ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৪২৬ টাকা ঋণের কথা উল্লেখ করেন। এবারের হলফনামায় ঋণ উল্লেখ করা হয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার ৬৪৪ টাকা। এ ছাড়া নিজের নামে একটি দোতলা বাসা থাকার কথাও উল্লেখ করেছেন। পেশা লিখেছেন ব্যবসা ও পরামর্শক।
কৃষি খাত থেকে তাঁর বর্তমান আয় ৯৯ হাজার ৫০০ টাকা। তাঁর স্ত্রীর বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান ও অন্যান্য ভাড়া থেকে আয় আসে ৪ লাখ ২৬ হাজার ৯৮৮ টাকা। ব্যবসা (হুরমত আলী মার্কেটের ফার্মের শেয়ার থেকে আয়) ১ লাখ ২৫ হাজার ৯৪৭ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে ফখরুলের আয় ১ লাখ ৪১ হাজার ১৮১ টাকা। স্ত্রীর সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ লাখ টাকা ও শেয়ার থেকে ৪৮ হাজার ৮৯৫ টাকা। ব্যবসার পরামর্শক খাত থেকে আয় ৬ লাখ টাকা, চাকরি থেকে সম্মানী ভাতা (দ্য মির্জাস প্রাইভেট লিমিটেড) ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা, স্ত্রীর চাকরির বেতন থেকে আয় হয় ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৫৪০ টাকা। ব্যাংক সুদ থেকে ২ হাজার ৮০৫ টাকা আয় হয় তাঁর। স্ত্রীর ব্যাংক সুদ থেকে আয় ২৬ হাজার ৯০৫ টাকা এবং ডিপিএস থেকে আয় ১১ লাখ ১৯ হাজার ৩৮৮ টাকা।
২০০৮ সালে কৃষি খাত থেকে ফখরুলের আয় ছিল ৫১ হাজার ৯৫০ টাকা, বাড়ি, দোকান ভাড়া থেকে ৫৫ হাজার ৯২১ টাকা, পরামর্শক পেশা থেকে ৩ লাখ টাকা আয়ের কথা তিনি উল্লেখ করেছেন। স্ত্রী রাহাত বাড়ি ও দোকানভাড়া থেকে ৪ লাখ ২৪ হাজার ৭১৮ টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ৬৩ লাখ ৮১৩ টাকা, চাকরি থেকে ১ লাখ ২১ হাজার ৬০০ টাকা আয় করেন বলে উল্লেখ ছিল।