স্কুল-কলেজ খোলার প্রস্তুতি ‘কাগজে’

দেশে ১৭ মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে
ফাইল ছবি

করোনার সংক্রমণ কমলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে—শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির কাছ থেকে এমন বক্তব্য এসেছে দিন কয়েক আগে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো বলছে, তারা প্রস্তুত। কিন্তু মাঠপর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, প্রস্তুতি কাগজে আর মুখে মুখে। এখন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টিকা দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য অন্যান্য প্রস্তুতি সেই অর্থে নেই।

কীভাবে জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয় আবার চালু করা যায়, তা নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করেছিল। স্কুলগুলোকে তারা ওই নির্দেশিকা পাঠিয়েছিল। আলাদাভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো তাদের পরিকল্পনা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠায়। কিন্তু তারা কোনো উত্তর পায়নি।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরও একটা নির্দেশনা তৈরি করেছিল তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য। নির্দেশনাটির শিরোনাম, ‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় চালুকরণ নির্দেশনা’। চলতি বছরের মার্চ থেকে ওই নির্দেশনা অনুসরণ করে স্কুল-কলেজ খোলার কথা ছিল। কিন্তু করোনার ডেলটা ধরনের প্রকোপ বাড়ায় সে সময় পিছিয়ে আসে সরকার। সরকারি সূত্রগুলো বলছে, সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে না নামা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনা নেই।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে কয়েকজন বিজ্ঞানী, চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেছে প্রথম আলো। স্কুল কীভাবে কবে খোলা হবে; প্রাথমিক, মাধ্যমিক না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আগে শ্রেণিকক্ষ ফিরবে; ক্লাসরুমে মাস্ক পরবে কি না—এসব নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ আছে। কিন্তু একটা বিষয়ে তাঁরা একমত। সেটা হলো করোনাভাইরাস আগামী কয়েক বছরেও পুরোপুরি নির্মূল হবে না। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই ভাইরাসকে মোকাবিলা করেই স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে হবে।

রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ও আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকতে পারে না। করোনাভাইরাসের সহজে নির্মূল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অন্তত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মহড়া এখনই শুরু করা উচিত।’

দেশে ১৭ মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। করোনার কারণে বিশ্বে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে যে ১৪টি দেশের স্কুল বন্ধ রয়েছে, বাংলাদেশ তার একটি। সম্প্রতি ভারতের কয়েকটি রাজ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়েছে। অন্যরাও দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

করোনার প্রকৃত প্রকোপ কতটা

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গত বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকার দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে। ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়ে সরকার চিন্তাভাবনা করছে। তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত স্কুল-কলেজ খুলছে না।’

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) যে নির্দেশনা চূড়ান্ত করেছে, ততে বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করতে হবে। ইউনিয়ন/ওয়ার্ড পর্যায়ে করোনা পরিস্থিতির মাত্রা কম বলা হবে তখনই, যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান–সংলগ্ন এলাকায় ১৪ দিন আরটিপিসিআর টেস্টে করোনা পজিটিভ রোগীর শতকরা হার হবে ৩ থেকে ৫।

করোনার সংক্রমণে সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) দেশে আরও ১৭৪ জনের মৃত্যু হয়। একই সময় নতুন রোগী শনাক্ত হয় ৬ হাজার ৯৫৯ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, এ সময় মোট ৩৩ হাজার ১৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ২১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।

বিজ্ঞানী, জনস্বাস্থ্যবিদ ও চিকিৎসকেরা মনে করেন, এই পরিসংখ্যান করোনার প্রকোপ কতটা, তা যথাযথভাবে নির্দেশ করে না। করোনা মোকাবিলায় কাজ করছেন এমন এক গবেষক প্রথম আলোকে বলেন, কত শতাংশ আসলে সংক্রমিত, তা বুঝতে শিক্ষক, তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক, গৃহিণী, রিকশাচালক, ফেরিওয়ালাসহ বিভিন্ন পেশা ও অবস্থানের মানুষকে পরীক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এখন পরীক্ষা করা হচ্ছে কেবল উপসর্গ থাকা লোকদের। কিন্তু প্রকৃত অবস্থা বুঝতে গ্রাম, শহর, শহরতলিসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষকে পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। ত্রুটিপূর্ণ পদ্ধতির ওপর নির্ভর করায় করোনার প্রকোপ কতটা, সে সম্পর্কে মন্তব্য করা যাচ্ছে না।

প্রস্তুতি কতটা আছে

গত ৩০ মার্চ থেকে একবার দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সে সময় বলা হয়েছিল, সব শ্রেণির ক্লাস প্রতিদিন হবে না। প্রথমে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের দ্বাদশ, মাধ্যমিক পর্যায়ের দশম ও প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন (সপ্তাহে ছয় দিন) ক্লাস হবে। আর শুরুর দিকে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে এক দিন ক্লাস হবে। নবম ও একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে দুদিন করে ক্লাস হবে। আর প্রাক্-প্রাথমিকের ক্লাস বন্ধ থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কথা ছিল ২৪ মে। কিন্তু করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তা আর হয়নি।

মাউশি ওই সময়ই নিরাপদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কীভাবে খোলা হবে, নিরাপদে শিক্ষাকার্যক্রম কীভাবে পরিচালনা করা হবে, অপেক্ষাকৃত সুবিধাবঞ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কী করা হবে—এসব বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশনা দেয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুর আগে ব্যাপক প্রচার চালানোর পরিকল্পনাও ছিল। পরিকল্পনার আওতায় অভিভাবক ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আলাপ করার কথা।

জানা গেছে, ব্যাপক প্রচার চালানোর যে পরিকল্পনা, তার এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন নেই। কারণ, সরকার এখনো স্কুল-কলেজ কবে খোলা হবে, সে সিদ্ধান্ত নেয়নি।

ঢাকার গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আবু সাঈদ ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, সরকার ঘোষণা দিলেই তাঁরা স্কুল খুলে দেবেন। সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। শিক্ষার্থীরা যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, সে জন্য স্কুলের মূল ফটকে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এক শিক্ষক ক্লাসে থাকতে থাকতেই আরেক শিক্ষক ঢুকবেন, যেন স্বাস্থ্যবিধি ছাত্রছাত্রীরা অনুসরণ করে।

স্কুলটিতে এক পালায় ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ জন শিক্ষার্থী আছে। তাদের ব্যবস্থাপনা কী হবে—জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক আবু সাঈদ ভূঁইয়া বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা এলে এ বিষয়ে পরিকল্পনা করবেন তাঁরা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও হয়তো কোনো নির্দেশনা দেবে। তখন বলা যাবে, সপ্তাহে কয় দিন কোন ক্লাস হবে, কোন পালায় কতজন থাকবে। এখনো এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার একটি সরকারি স্কুলের শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা মূলত প্রতি সপ্তাহে একবার গিয়ে স্কুল ঠিকঠাক ঝাড়পোঁছ করা হচ্ছে কি না, তা তদারক করছেন। সরকার ঘোষণা দিলে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা স্কুল খোলার জন্য বেশ কয়েক মাস ধরেই প্রস্তুত আছেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে যা যা করা দরকার, তার সবই করছেন। স্কুলগুলো নিয়মিত পরিদর্শন করা হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁরা সব সময় যোগাযোগ রাখেন। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সব স্কুল যুক্ত আছে।

তবে কিশোরগঞ্জের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, মাস ছয়েক আগে অধিদপ্তর তাঁদের কাছ থেকে স্কুল আবার চালু করার ব্যাপারে পরিকল্পনা চেয়েছিল। তাঁরা সেই পরিকল্পনা পাঠান। স্কুলে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাস্কের মজুত আছে। কিন্তু স্কুলে প্রচুর ছাত্রছাত্রী। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কীভাবে তাদের স্কুলে ফেরত আনা যায়, সে সম্পর্কে এখনো কোনো নির্দেশনা তাঁরা পাননি। শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন স্কুলে আসবে, নাকি দু-এক দিন আসবে, কয় পালায় কতক্ষণ ক্লাস হবে, সে সম্পর্কে এখনো তাঁরা জানেন না।

তবে শিক্ষকদের টিকা কার্যক্রম চলছে জোরেশোরে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেউ বাদ পড়লে তিনি কেন টিকা নেননি, সে সম্পর্কে তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে। এটি থেকে তাঁরা ধারণা করছেন, হয়তো স্কুল খুলে যাবে।

শিগগির নীতিমালা বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ আছে কি না, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য কোনো মহড়া হয়েছে কি না—এসব বিষয়ে জানতে মাউশির মহাপরিচালক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুকের সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি ফোন ধরেননি।

খোলার আগে প্রস্তুতি কী হবে

প্রতিবেশী দেশ ভারতের কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকারের হাতে। আবার উত্তর প্রদেশ জেলাগুলোকে প্রয়োজন মাফিক ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমসের খবর, দিল্লি ও পাঞ্জাব স্কুল খোলার প্রস্তুতি হিসেবে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। হিমাচল প্রদেশে শিক্ষকেরা ছাত্রদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন তাদের স্কুলমুখী করতে।

চীনের উহানে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলেছে গত বছরের সেপ্টেম্বরে। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন বলছে, চীনে শিক্ষার্থীদের স্কুলে ঢোকানোর আগে তাদের ভ্রমণের ইতিহাস সংগ্রহ করা হয়। স্কুল শুরুর পর দিনে তিনবার তাপমাত্রা মাপাসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি না, তা দেখতে স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কমিউনিস্ট পার্টির কর্মীদের কাজে লাগানো হয়েছে।

এসবের কোনো খবরই নেই বাংলাদেশে। বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যবিদেরা মনে করেন, সব স্কুল-কলেজের জন্য এক ধরনের নির্দেশনা কার্যকর হবে না। স্কুলের অবস্থান, স্থাপনা, ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ও বয়সভেদে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এমনও হতে পারে, স্কুলে জানালা আছে, কিন্তু তা খোলা যায় না। জানালাটা খোলার ব্যবস্থা করতে হবে। বৃষ্টির ছাট আটকাতে কার্নিশ দরকার হবে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীভেদে শৌচাগারের সংখ্যা কম। পর্যাপ্ত শৌচাগার থাকা জরুরি। মাস্ক, সাবান, থার্মোমিটারের মজুত নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে ব্যাপক ভিত্তিতে প্রচার চালাতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারপারসন সায়েদুর রহমান খসরু প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আলো-বাতাসের চলাচল নিশ্চিত করতে হবে সবার আগে। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র আছে, সেসব প্রতিষ্ঠানে ঝুঁকি থাকবে। শিশুদের মধ্যে সংক্রমণের হার এখনো কম। তাদের স্কুলে পাঠানো যেতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুতি কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার, হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ও পরিষ্কার শৌচাগার থাকা বাধ্যতামূলক। এগুলোর পর্যাপ্ত মজুত এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তার ব্যবহার নিশ্চিত করে তবেই বাকি কাজগুলো করতে হবে।

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন অবশ্য মনে করেন, আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে শুরু করা যায়। শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা আইসোলেশন সেন্টার, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারকে উন্নত করা, অ্যাম্বুলেন্সগুলো সচল রাখার পরামর্শ তাঁর।

শিশুদের সংক্রমণের ঝুঁকি কম, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় আগে কেন খোলার পক্ষ মত তাঁর—এমন প্রশ্নের জবাবে মুশতাক হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বড় অংশই বাইরে বেরোচ্ছে আগে থেকে। অনেকে টিকা নিয়েছেন। তাঁরা সংক্রমিত হলেও ঝুঁকি কম।

অভিভাবকদের বড় অংশ চান খুলুক

শিক্ষা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থাগুলোর মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযানের এডুকেশন ওয়াচ ২০২০-২১ সমীক্ষার অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনের তথ্য হলো, দেশের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষা কর্মকর্তা স্কুল খুলে দেওয়ার পক্ষে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী দ্রুত ক্লাসে ফিরতে চায়। আর ৭৬ শতাংশ অভিভাবক ও ৭৩ শতাংশ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্কুল খুলে দেওয়ার পক্ষে।

শিক্ষা ও শিশুরক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক রাখাল রাহা প্রথম আলোকে বলেন, অন্য খাতকে যেভাবে সরকার গুরুত্ব দিয়েছে, শিক্ষাকে দেয়নি। বিশ্বের যেসব দেশ করোনার মারাত্মক সংক্রমণের মধ্যে দিয়ে গেছে, তারাও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় কখনো কখনো আবার বন্ধও করেছে। বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের শুরুতে মফস্বল বা গ্রামাঞ্চলে রোগের প্রকোপ ছিল না। অথচ সেখানেও স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

কোভিড-১৯-বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, ‘সংক্রমণ যখন ২০ শতাংশের ওপরে, তখন আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরামর্শ দিচ্ছি না। লকডাউন উঠেছে। লকডাউন তুলে দেওয়ার কী প্রভাব পড়ছে, তা সপ্তাহ দুয়েক পর দেখে হয়তো একটা কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।’