কিছু স্কুলে কর্তৃপক্ষের ছাড়
স্কুল খুলছে কাল থেকে। এখনো নতুন পোশাক তৈরি করাতে পারেননি অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরা।
রাজধানীর বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সশরীর ক্লাস শুরুর প্রথম কয়েক দিন শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট পোশাক বা ইউনিফর্ম পরার বিষয়ে ছাড় দিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান আপাতত শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্মের কাছাকাছি রঙের পোশাক পরে স্কুল বা কলেজে আসতে বলেছে।
কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে জানিয়ে অভিভাবকদের নোটিশ পাঠিয়েছে। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নোটিশ দেয়নি, তবে এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের চাপ না দেওয়ার বিষয়টি ভাবনায় রেখেছে।
বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তাঁরা জানিয়েছেন, প্রায় দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। অনেক শিক্ষার্থীর স্কুলের পুরোনো পোশাক এখন আর গায়ে লাগে না। অনেকের সাদা পোশাকের রং হলদেটে হয়ে গেছে। এতদিন অনলাইনে ক্লাস করার ক্ষেত্রে নতুন পোশাক প্রয়োজন হয়নি।
করোনা মহামারির কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ৫ সেপ্টেম্বর সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায়। আগামীকাল রোববার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে। শুরুতে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে সশরীর ক্লাসে অংশ নেবে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস হবে। বাকিদের আপাতত সপ্তাহে এক দিন ক্লাস হবে।
স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত আসায় হঠাৎ করে দরজির দোকানে স্কুলের নতুন পোশাক তৈরির চাপ পড়েছে। দরজিরা বলছেন, তাঁরা দিন-রাত কাজ করেও কমপক্ষে এক সপ্তাহের আগে স্কুলের পোশাক তৈরি করে দিতে পারছেন না। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
যেসব স্কুল অথবা কলেজ শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট পোশাক পরার ক্ষেত্রে সাময়িক ছাড় দিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে রাজধানীর নেভি স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এই প্রতিষ্ঠানের খিলক্ষেত শাখার এক অভিভাবক উম্মে সালমা প্রথম আলোকে বলেন, তিনি গত বুধবার স্কুল থেকে একটি নোটিশ পান, যেখানে বলা হয়েছে, প্রথম দুই সপ্তাহ সাধারণ শোভন পোশাকে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারবে। ইউনিফর্মের বাধ্যবাধকতা থাকবে না। তবে এই সময়ের মধ্যে স্কুলের নির্ধারিত দরজির কাছ থেকে অবশ্যই ইউনিফর্ম বানিয়ে নিতে হবে। এই অভিভাবক জানান, ওই স্কুলে তাঁর দুই মেয়ে পড়ে।
রাজধানীর আরেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্যার জন উইলসন স্কুলও শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম পরে আসার বিষয়টি শিথিল করেছে। স্কুলটির অধ্যক্ষ সাব্রিনা শহীদ প্রথম আলোকে বলেন, স্কুলে আসতে হলে শিক্ষার্থীদের নতুন ইউনিফর্ম বানাতে হবে, বিষয়টি তাঁরা বুঝতে পেরেছেন। এ জন্য স্কুল খোলার পর প্রথম দিকে ইউনিফর্ম বাধ্যতামূলক না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য অভিভাবকদের স্কুলের নির্দিষ্ট টি-শার্ট সংগ্রহ করতে বলা হবে। তিনি বলেন, অন্তত একই রকম টি-শার্ট পরলেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে একধরনের একতার বোধ তৈরি হবে।
রাজধানীর সেন্ট যোসেফ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ গত বৃহস্পতিবার ইউনিফর্ম পরার ক্ষেত্রে শিথিলতার বিষয়টি জানিয়ে অভিভাবকদের নোটিশ দেয়। এ প্রতিষ্ঠানের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক হিউবার্ট স্বপন বৈরাগী প্রথম আলোকে বলেন, অভিভাবকদের দেওয়া নোটিশে বলা হয়েছে, ইউনিফর্মে শিথিলতা এলেও শিক্ষার্থীরা যে পোশাক পরে আসবে, তা যেন শোভন হয়। সাদা যেকোনো শার্ট হতে পারে। জিনস বা গ্যাবার্ডিন কাপড়ের প্যান্ট না পরতে বলা হয়েছে।
আনুষ্ঠানিক নোটিশ না দিলেও রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ইউনিফর্মের বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শাখার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘোষণা দিলে শিক্ষার্থীরা সবাই দল বেঁধে ইউনিফর্ম ছাড়া সাধারণ পোশাক পরে আসতে পারে। তবে যারা ইউনিফর্ম পরে আসবে না, তারা যৌক্তিক কারণ দেখালে কিছু বলা হবে না।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট পোশাক পরে আসার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ায় অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা কমেছে। তবে যেসব স্কুল এ বিষয়ে ছাড় দেয়নি, তাদের নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন কোনো কোনো অভিভাবক। রাজধানীর মিরপুরের একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষার্থীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক বলেন, দরজি বলেছেন, ২০ সেপ্টেম্বরে আগে নতুন পোশাক দিতে পারবে না। তাঁর মেয়ে স্কুলে ইউনিফর্ম ছাড়া যেতে রাজি নয়।