মাদারীপুরে দশম শ্রেণির স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টা ও নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য মোক্তার হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে জেলার মুখ্য বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ হোসেন আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে মোক্তারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। গতকাল সোমবার রাত ১২টার দিকে ওই স্কুলছাত্রীর মামা বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় মোক্তারকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-৯-এর ১ ধারায় একটি মামলা করেন। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মাদারীপুর পুলিশ লাইনসে কর্মরত নায়েক মোক্তার হোসেন তাঁর ভাড়া বাসায় দশম শ্রেণির ওই স্কুলছাত্রীকে ডেকে নেন। এ সময় দরজা বন্ধ করে তিনি ধর্ষণচেষ্টা চালান। ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে ওই স্কুলছাত্রীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালান মোক্তার। বিষয়টি স্থানীয়রা টের পেয়ে বাইরে থেকে মোক্তারের ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। একপর্যায়ে মোক্তার পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে ওই স্কুলছাত্রীকে ঘরের পেছনের ভেন্টিলেটর ভেঙে নিচে ফেলে দেন। এতে গুরুতর আহত হয় ওই স্কুলছাত্রী। স্থানীয়রা ওই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
মামলার বাদী ওই স্কুলছাত্রীর মামা বলেন, ‘প্রায় ৫ বছর আগে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মেয়েটি তাঁর বাবাকে হারায়। এরপর থেকেই ওর মা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। মেয়েটি খালা ও নানার বাড়িতেই বড় হয়। এমন একটি ঘটনা ওর সঙ্গে ঘটবে, এটা আমরা কিছুতেই মানতে পারছি না। আমার ভাগনির সঙ্গে যে পুলিশ এই কাজ করেছে, আমি তার কঠোর বিচার চাই।’
আজ মঙ্গলবার দুপুরে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক অখিল সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্কুলছাত্রী এখন অনেকটা সুস্থ। তার ডান পা ভেঙে যাওয়াতে পায়ে গোড়ালি থেকে হাঁটু পর্যন্ত ব্যান্ডেজে মোড়ানো আছে। স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে একটু সময় লাগবে। আরও কয়েক দিন তাকে হাসপাতালে রেখে তারপর ছাড়পত্র দেওয়া হবে।’ ধর্ষণচেষ্টার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছু আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন এখনো হাতে আসেনি।’
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) উত্তম প্রসাদ পাঠক বলেন, এ ঘটনায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে মোক্তারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাঁকে প্রত্যাহারের পর থেকেই নজরদারিতে রাখে পুলিশ। পরবর্তীতে নির্যাতনের শিকার ওই স্কুলছাত্রীর মামা বাদী হয়ে মামলা করলে রাতেই পুলিশ লাইনস থেকে মোক্তারকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয়। আজ মঙ্গলবার সকালে তাঁকে আদালতে পাঠায় পুলিশ। এ বিষয়ে সব ধরনের আইনগত পদক্ষেপ নেওয়াসহ কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।’
আদালত পুলিশের পরিদর্শক রমেশ কুমার দাস বলেন, ‘অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।’