আট মাস ধরে বেতন না পেয়ে সৌদি আরবের রিয়াদে মানবেতর জীবন যাপন করছেন অন্তত ৯৩ বাংলাদেশি। মরুভূমির তীব্র গরমে বাসস্থান, খাবার ও পানির সংকটে চরম দুর্ভোগে আছেন তাঁরা। সমস্যা সমাধানে তাঁরা দ্রুত বাংলাদেশ দূতাবাসের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
প্রবাসী এই বাংলাদেশিরা রিয়াদের আল রাফা কনস্ট্রাকশন কোম্পানির কর্মী। গত দুদিন তাঁরা মুঠোফোনে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান।
এই ৯৩ জনের একজন টাঙ্গাইলের সাজ্জাদ সিদ্দিকী বলেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে এই কোম্পানিতে আছেন। ভালো বেতন, সবকিছু ভালো ছিল। তাঁরা ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পেতেন। কিন্তু মালিকের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে আবদুর রহমান প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সংকট শুরু হয়। একপর্যায়ে মালিক প্রতিষ্ঠানে আসাও ছেড়ে দেন। তিনি কোথায় আছেন, তা-ও তাঁরা জানেন না। গত আগস্ট থেকে তাঁরা বেতন পাচ্ছেন না। বাংলাদেশিদের মধ্যে ৩৮ জন শ্রম আদালতে মামলা করেছেন।
বরিশালের জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা যাঁরা বাংলাদেশি এখানে আছি, তাঁদের কারও থাকার জায়গা নেই। কোম্পানির বারান্দায়, মালটানা গাড়িতে, যে যেখানে পারছি দিন কাটাচ্ছি। খাবার নেই, পানি নেই। আশপাশের সৌদি লোকজন এবং কবির হোসেন নামের এক বাংলাদেশি খাবার দিয়ে যাচ্ছেন।’
এই কর্মীরা জানান, তাঁদের আকামার (কাজের অনুমতিপত্র) মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ফলে কাজ নিয়ে অন্য জায়গায় যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না।
মুন্সিগঞ্জের তোফাজ্জল হোসেন ও আনোয়ার হোসেন, গাজীপুরের শফিউল্লাহ, কিশোরগঞ্জের আমানউল্লাহসহ প্রবাসী এই কর্মীদের সবার অভিযোগ, তাঁরা বাংলাদেশ দূতাবাসে গিয়ে বিষয়টি জানাতে চাইলেও প্রথম দিন তাঁদের সঙ্গে কেউ দেখাই করেননি। পরে দূতাবাসের শ্রম শাখার কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে তাঁরা বিষয়টি জানান। এখনো সমাধান পাননি।
রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব (শ্রম) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই শ্রমিকদের বিষয়টি আমরা জানি। মূলত মালিকানা দ্বন্দ্ব নিয়ে ওই কোম্পানিতে সমস্যা চলছে। কেবল বাংলাদেশিরা নন, ওই কোম্পানির ভারত ও পাকিস্তানের শ্রমিকেরাও একই সমস্যায় আছেন। ৩৮ জন বাংলাদেশি এ বিষয়ে একটি মামলা করেছেন। আমরা তাঁদের আইনগত সহায়তা দিচ্ছি। পুলিশ, শ্রম আদালত সবার সঙ্গে কথা বলছি।’