আকাশ ভরা তারা, আর হেমন্তের মিষ্টি বাতাস। তারাগুলো যেন ধরণির বুকে এক চিলতে আলো, তবে আলোকচ্ছটা মোটেই নয়। এটি ছিল প্রথম আলো প্রকাশের ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রীতি সম্মিলনী, যেখানে হাজির হন প্রথম আলোর শুভানুধ্যায়ীরা।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে এই আয়োজনকে আলোকিত করেছিলেন সেই সাহসী মানুষেরা, যাঁরা পুরো বাংলাদেশকে এগিয়ে দিয়েছেন নিজের কর্ম, ত্যাগ আর পরিশ্রম দিয়ে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন রাজশাহীর চরখিদিরপুরের বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে লড়াই করা আমজাদ হোসেন, গণিত অলিম্পিয়াডে স্বর্ণপদক জয়ী আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরীর মতো আলোকিত মানুষেরা। সেই সাহসী মানুষের কথাগুলো প্রতিদিন তুলে ধরছে প্রথম আলো। প্রীতি সম্মিলনীতে তাঁদেরও কাছে টেনে আনে প্রথম আলো।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই আয়োজনে দেশের বরেণ্য ব্যক্তিরা যোগ দেন। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান সোনারগাঁও হোটেলে অতিথিদের স্বাগত জানান। সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় শুরু হয় এই অনুষ্ঠান। শুরুতে ‘ও আলোর পথযাত্রী’ গান পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পী তাহসান ও আরমিন মুসা। সূচনা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ।
এরপর রাজশাহীর পদ্মার চরে প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত আলোর পাঠশালার শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘আলোর পাঠশালা’ প্রদর্শন করা হয়। প্রামাণ্যচিত্রটি পরিচালনা করেছেন রেদওয়ান রনি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে প্রথম আলোকে শুভেচ্ছা জানান ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ, ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার–এর সম্পাদক মাহফুজ আনাম ও তাঁর স্ত্রী শাহীন আনাম, মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার, শিক্ষক আবুল কাশেম ফজলুল হক, বেঙ্গল গ্রুপের কর্ণধার আবুল খায়ের লিটু, বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধূরী, গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী।
র্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে প্রথম আলো সম্পাদকের হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেন। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রবির সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ।
অনুষ্ঠানে যোগ দেন নাট্যব্যক্তিত্ব হাসান ইমাম, চিত্রনায়িকা সারাহ বেগম কবরী, অভিনেতা তারিক আনাম খান, অভিনেত্রী দিলারা জামান, সুবর্ণা মুস্তাফা, মেহজাবীন, শবনম ফারিয়া, চিত্রনায়ক সায়মন, সংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর, আবিদা সুলতানা, রফিকুল আলম, তপন চৌধুরী, কুমার বিশ্বজিৎ, এসডি রুবেল, ফুটবল তারকা কায়সার হামিদ, শেখ মো. আসলাম প্রমুখ।
২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর দৈনিক প্রথম আলো প্রকাশের ২০ বছর পূর্ণ হয়েছে। ঠিক ২০ বছর আগে, ১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বর সকালে দৈনিক প্রথম আলো প্রথম আলোর মুখ দেখেছিল। প্রথম দিনেই প্রথম আলো ছাপা হয়েছিল ১ লাখ ২২ হাজার কপি।
বাংলাদেশের সব দৈনিকের মধ্যে প্রথম আলোর পাঠকসংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে প্রথম আলো প্রতিদিন পাঠ করেন ৬৬ লাখ পাঠক। সম্প্রতি বহুজাতিক গবেষণা ও জরিপ প্রতিষ্ঠান কান্তার এমআরবি পরিচালিত ন্যাশনাল মিডিয়া সার্ভে (এনএমএস বা জাতীয় প্রচারমাধ্যম জরিপ) ২০১৮-তে এই তথ্য উঠে এসেছে। গুগল অ্যানালিটিকসের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ২০০টির অধিক দেশ থেকে অনলাইনে প্রথম আলো পাঠ করেন আরও ১০ লাখ পাঠক। বিশ্বের বাংলা ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে প্রথম আলোর পাঠকসংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন বিএফইউজের সাবেক সভাপতি ও সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল, পিআইবির মহাপরিচালক শাহ আলমগীর, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী ও বিএফইউজের সহসভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা।
আয়োজনে যোগ দিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। শুভেচ্ছা জানাতে আসেন রিহ্যাবের সাবেক সভাপতি তানভীরুল হক প্রবাল।
১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বর প্রথম আলোর প্রকাশের দিনটিকে স্মরণ করে সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘শুধু ঢাকা শহর নয়, সারা দেশের সব শহর আর গ্রামের অনেক নতুন-পুরোনো রাজনীতিক, সাংস্কৃতিক ও সাংবাদিক কর্মী–বন্ধুর অকুণ্ঠ সমর্থন আমরা পেয়েছিলাম। একইভাবে স্মরণ করি আমাদের এজেন্ট ও হকার বন্ধুদের কথাও, যাঁদের ছাড়া কাগজ চলতে পারে না। আমাদের মনে পড়ে, প্রথম আলো প্রকাশের আগেই দেশের মানুষের মধ্যে একটা সাড়া পড়ে গিয়েছিল। আমরা ১০৪ জন তরুণ সাংবাদিক একটি সাহসী, মুক্ত ও স্বাধীন পত্রিকা প্রকাশের ঘোষণা দিয়ে প্রচারে নেমেছিলাম। অনেকের সহমর্মিতা-সহযোগিতা পেয়েছিলাম। স্বল্প সময়ের প্রস্তুতি নিয়ে, অনেক ভয় আর অজ্ঞতা নিয়ে আমরা প্রথম আলো প্রকাশ করেছিলাম। সেদিনের সেই আবেগ আর ভালোবাসার কথা ভাবলে আজ বিস্মিত হই।’
‘যা কিছু ভালো, তার সঙ্গে প্রথম আলো’ মন্তব্য করে মতিউর রহমান বলেন, ‘প্রথম আলোয় আমরা দেশের মানুষের অনেক বিজয়ের গল্প, সাফল্যগাথা লিখতে চাই। একইভাবে রাষ্ট্রের সফলতার কথা, মানুষের নতুন নতুন উদ্যোগের কথা, প্রতিষ্ঠানের সফলতার কথা প্রতিনিয়ত মানুষকে জানাতে চাই। এসবের মাধ্যমেই আমরা আরও এগিয়ে যেতে চাই ভালোর সাথে, আলোর পথে।’
এনএমএস-২০১৮ অনুযায়ী ২০১৮ সালে প্রথম আলোর পাঠক ১৩ লাখ বেড়ে হয়েছে প্রায় ৬৬ লাখ। ২০১৬ সালের এনএমএস অনুযায়ী রোজ প্রথম আলোর পাঠক ছিল প্রায় ৫৩ লাখ।
প্রথম আলো অনলাইন (www.prothomalo.com) সব বাংলাদেশি ওয়েবসাইটের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়। অ্যালেক্সার তথ্য অনুযায়ী, বাংলা ভাষায় পৃথিবীর এক নম্বর ওয়েবসাইট প্রথম আলো। এ ছাড়া ফেসবুকে প্রথম আলোর পেজে (www.facebook.com/DailyProthomAlo) ১ কোটি ৩৯ লাখের বেশি অনুসারী রয়েছেন। অনুসারীর সংখ্যার বিচারে প্রথম আলো বিশ্বের সব গণমাধ্যমের মধ্যে ৭৩ তম অবস্থানে রয়েছে।