খোলা ট্রাকের বাম্পার ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন শরীফ হোসেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় তিনি হারান শ্রবণশক্তি, দুই পায়ে গুরুতর জখমসহ আঘাত পান সারা শরীরে। যন্ত্র ছাড়া এখন কিছুই শুনতে পান না। শরীফ হোসেন বলেন, ‘দুই পায়ে বেশি অসুবিধা। দুই পায়েই স্প্লিন্টার ভর্তি। চলাফেরা করতে পারি না ঠিকমতো, পা ভার হয়ে থাকে। কয়েক মাস পরপর হাসপাতালে গিয়ে স্প্লিন্টার বের করতে হয়।’
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় শারীরিক সমস্যার কথা এভাবেই বলছিলেন গেন্ডারিয়ার বাসিন্দা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কোষাধ্যক্ষ শরীফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘কানে মেশিন দিলে কথা শুনি। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় এখন আমি মোটামুটি ভালো আছি। তবে আমার ঘুমের অনেক সমস্যা হয়, শরীরে যন্ত্রণা হয়। এই যন্ত্রণার কথা বলে বোঝানো যাবে না।’
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনার ১৭ বছর পরও তাঁদের অনেকেই আর স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাননি। হামলার যন্ত্রণা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন।
গেন্ডারিয়ার ধূপখোলা কাঁচাবাজারের পাশে হার্ডওয়্যার ও মেশিনারির ছোট্ট কারখানা শরীফ হোসেনের। গ্রেনেড হামলায় আহত হওয়ার আগে তাঁর ব্যবসা বড় ছিল, ভালো ছিল। এখন আর পারেন না ব্যবসা সামাল দিতে। কর্মচারীকে দায়িত্ব দিয়ে তিনি ব্যবসা তদারক করছেন। কোনোমতে চলাচল করতে পারেন শরীফ। তবে একটুতেই হাঁপিয়ে ওঠেন।
শরীফ বলেন, পাসহ সারা শরীর ব্যথা করে। এই অশান্তির কথা কাউকে বলে বোঝানো যাবে না।
শরীফ হোসেন দলের অন্য মিছিল–সমাবেশের মতো ২০০৪ সালের ২১ আগস্টেও যোগ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের সমাবেশে। কিন্তু সেদিনের গ্রেনেড হামলায় তিনি শ্রবণশক্তি হারান। পা দুটিও গ্রেনেডের স্প্লিন্টারে ক্ষত–বিক্ষত। ডান পায়ে বড় একটি গর্ত হয়ে গেছে।
শরীফ বলেন, আহত অবস্থায় প্রথমে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। পরে নেওয়া হয় পঙ্গু হাসপাতালে। এরপর একটি বেসরকারি ক্লিনিকে দীর্ঘদিন তাঁর চিকিৎসা চলে। ২০১২ সালের দিকে তিনি হাঁটাচলা শুরু করার মতো সুস্থ হন।
খুঁড়িয়ে হাঁটেন নাসিমা ফেরদৌসী
২০০৪ সালে নাসিমা ফেরদৌসী ছিলেন ঢাকা মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। সেদিনের কথা মনে হলে এখনো তিনি শিউরে ওঠেন। গ্রেনেড হামলার পর তিনি জ্ঞান হারান। বিকেলে জ্ঞান ফিরলে দেখেন, তিনি লাশের ট্রাকে শুয়ে আছেন। তখন চিৎকার করে ওঠেন তিনি। এরপর তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
নাসিমা জানান, ওই ঘটনায় তাঁর ডান পা কেটে ফেলতে চেয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। পরে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় ভারতের একটি হাসপাতালে তিনি তিন মাস চিকিৎসা নেন। সেই পা আর কাটতে হয়নি। তিনি বলেন, ওই হামলায় তাঁর শরীরে ১ হাজার ৪০০ স্প্লিন্টার ঢোকে। তাঁর ডান পা হাঁটুর নিচ থেকে উড়ে যায়। ডান হাত ও বাঁ পা ভেঙে যায়।
এখনো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে হয় নাসিমাকে। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় ঘুমের। আগের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি, মিটিং-মিছিলে যেতে পারি না। এই কষ্ট মৃত্যুর আগপর্যন্ত বইতে হবে।’