সেতুর এক প্রান্তে বসতবাড়ি, অপর প্রান্তে চাষের জমি। নাম ‘খোদার হাট সেতু’। চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বৈলতলী ইউনিয়নে শঙ্খ নদের ওপর ৩৪৮ দশমিক ১২ মিটার দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণ করতে লেগেছে ২০ বছর। আর এক বছর ধরে সেতুটি চালু করা যাচ্ছে না দুই পাশের সংযোগ সড়ক না থাকায়। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বিকল্প সড়ক সৃষ্টির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১৯৯৫ সালে এই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়।
সেতুর উত্তরে বৈলতলী ইউনিয়নের জাফরাবাদ গ্রাম, দক্ষিণে বশরতনগর গ্রাম। সংযোগ সড়কের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন না হওয়ায় সেতুটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলে জানান চট্টগ্রামের দোহাজারী সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেন, সেতুর দুই প্রান্তে এক কিলোমিটার করে সংযোগ সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। সেতুটি বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষও দোহাজারী সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।
চন্দনাইশের সাংসদ (চট্টগ্রাম-১৪) নজরুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সেতুটি দ্রুত চালু করার জন্য জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে শিগগিরই উদ্যোগ নেওয়া হবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, জাফরাবাদ অংশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হলে তা চন্দনাইশের দেওয়ানহাট সড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে। এই সড়ক হয়ে আট কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলে সরাসরি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ওঠা যাবে। অন্যদিকে বশরতনগর প্রান্তে এক কিলোমিটার সংযোগ সড়ক করা গেলে তা চন্দনাইশের খোদার হাট বাজারের সঙ্গে যুক্ত হবে। খোদার হাট সড়কটি চট্টগ্রাম-বাঁশখালী সড়কের সঙ্গে যুক্ত।
চন্দনাইশের বৈলতলী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আহমদ ছৈয়দ চৌধুরী বলেন, এ সেতু ব্যবহার করে বাঁশখালী দিয়ে কক্সবাজার ও আনোয়ারা হয়ে চট্টগ্রামের যাতায়াত অনেক সহজ হবে। এ ছাড়া সেতুটি চালু হলে বৈলতলীর সঙ্গে বরমা, সাতকানিয়ার আমিলাইশ, চরতি, মরফলা, গাটিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে।
দোহাজারী সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, ১৯৯৫ সালে প্রথম নকশায় সেতুটির দৈর্ঘ্য ধরা হয়েছিল ২৯৪ মিটার। তখন সম্ভাব্য ব্যয় ঠিক করা হয় ৮ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আল-আমিন কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণের কাজ পায়। কিন্তু বন্যা, সেতু এলাকায় ভাঙনের কারণে নির্মাণকাজে সমস্যা হয়। ১৯৯৮ সালে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি সেতুর ৩০ শতাংশ কাজ শেষ করে ৩ কোটি ৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা বিল তুলে চলে যায়।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, শঙ্খ নদে ভাঙন, নাব্যতা বৃদ্ধির কারণে ২০০০ সালে সেতুটির নকশা সংশোধন করা হয়। এতে সেতুর দৈর্ঘ্য বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪৮ দশমিক ১২ মিটার। নতুন করে ব্যয় ঠিক করা হয় ১৪ কোটি ৪৮ লাখ ১০ হাজার টাকা। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় টানা প্রায় ১২ বছর সেতুটির কাজ বন্ধ থাকে। এরপর অসমাপ্ত সেতু সমাপ্তকরণ প্রকল্পের আওতায় ২০১১ সালের জুলাই মাসে দ্বিতীয়বার দরপত্র ডাকা হয়। ২০১৫ সালের জুন মাসে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর দেখা যায়, মোট ১৭ কোটি ২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
দোহাজারী সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শান্তনু পালিত বলেন, সেতুর দুই প্রান্তে সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। এ জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ ২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ছাড় করা হয়েছে। জাফরাবাদ ও বশরতনগর এলাকার প্রায় ৬০টি পরিবারের জমি, পুকুর ও বাড়িঘর অধিগ্রহণ করা হচ্ছে।
ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে বৈলতলী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আহমদ ছৈয়দ চৌধুরী বলেন, অধিগ্রহণ করা এলাকায় তাঁদের প্রায় ৩৬ শতক জায়গা রয়েছে। তিনিসহ এলাকার মোট চারজন ভূমি অধিগ্রহণের টাকা পেয়েছেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, ভূমি অধিগ্রহণের টাকা পেতে লোকজন হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
ক্ষতিপূরণ পাওয়া আবদুল হাকিম বলেন, ‘টাকা পেতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের খুশি করতে হয়েছে।’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি হুকুমদখল কর্মকর্তা মো. শামসুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, নদীভাঙন এলাকা হওয়ায় অনেকের ভূমির রেকর্ডপত্র সঠিক নেই। যে কারণে ক্ষতিপূরণ পেতে দেরি হচ্ছে। যাঁর আবেদনপত্র সঠিক, তিনি দ্রুত ক্ষতিপূরণ পেয়ে যাচ্ছেন।
তবে দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল মিয়া বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের টাকা বিতরণ না হওয়ায় সংযোগ সড়কের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।
সেতুর কাজ শেষ হতে ২০ বছর লাগল। রাস্তা কবে হবে জানতে চাইলে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শান্তনু পালিত বলেন, জমি অধিগ্রহণ শেষ হলেই রাস্তার কাজ শুরু করা হবে।