ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে গুরুতর আহত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) ছাত্র মাহাদি জে আকিব আজ মঙ্গলবার সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। মাথায় দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচারের পর আজ দুপুর ১২টার দিকে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
গত বছরের ৩০ অক্টোবর চমেক ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের এক পক্ষের হামলায় গুরুতর আহত হন আকিব। ওই দিন মাথায় অস্ত্রোপচার করে খুলির একটি অংশ (হাড়) খুলে পেটের চামড়ার নিচে রাখা হয়েছিল। তখন আইসিইউতে থাকা আকিবের মাথার ব্যান্ডেজের ওপর লিখে দেওয়া হয়েছিল, ‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না।’ এ ছবি তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। এরপর তিনি বাড়ি ফিরেছিলেন।
এ বছরের মার্চে দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচারের জন্য আবার চমেক হাসপাতালে ভর্তি হন আকিব। গত ২৮ মার্চ দ্বিতীয় দফায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা অস্ত্রোপচার করে তাঁর মাথার হাড় প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
নিউরোসার্জারি বিভাগের তত্ত্বাবধানে আকিবের অস্ত্রোপচার হয়। দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচার শেষে তিনি সুস্থ রয়েছেন বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। তাঁর অস্ত্রোপচারের স্থানে কিছু সেলাই কাটা হয়েছে গতকাল সোমবার। আজ আরও কিছু সেলাই কেটে তাঁকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান নোমান খালেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আকিব সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাঁকে কয়েক দিন বিশ্রামে থাকতে বলা হয়েছে। এরপর পুনরায় আকিবকে ফলোআপের জন্য হাসপাতালে আসতে হবে। তাঁর কিছু ব্যায়াম রয়েছে। সেগুলো করতে হবে। এ ছাড়া মানসিক শক্তি ফেরানোর জন্য কিছু কাজ করতে হবে।
ছাড়পত্র দেওয়ার সময় বিভাগের চিকিৎসকেরা সবাই আকিবের সঙ্গে ছবি তুলেছেন। এ সময় আকিবের বাবা স্কুলশিক্ষক গোলাম ফারুক মজুমদার উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘ছেলে অসুস্থ হলে সব মা–বাবা উদ্বিগ্ন থাকেন। যা হয়েছে, আমি মেনে নিয়েছি। সবার দোয়ায় এখন সুস্থ হয়েছে সে। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।’
অসুস্থ অবস্থায় আকিব এমবিবিএসের প্রথম পেশাদার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। বাড়ি থেকে এসে ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। আকিব সব বিষয়ে পাস করেছেন উল্লেখ করে গোলাম ফারুক বলেন, ‘সবার দোয়া ও ভালোবাসা রয়েছে বলে আকিব সুস্থ হয়েছে। সব পরীক্ষায় পাস করেছে। ভবিষ্যতে যেন সে একজন ভালো চিকিৎসক হয়, এ দোয়া চাই।’
দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচারের পর আকিবকে কয়েক দিন আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। পরে সেখান থেকে বের করে হাসপাতালের কেবিনে রাখা হয়। আজ কেবিন থেকে তিনি কুমিল্লার বাড়ির উদ্দেশে চলে যান। এ সময় আকিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘শারীরিকভাবে কোনো সমস্যা অনুভব করছি না। সব দিক দিয়ে ফিট মনে হচ্ছে। বাড়িতে গিয়ে আম্মার সঙ্গে দেখা করব।’
গত বছরের ২৯ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রধান ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মারামারিতে কয়েকজন আহত হন। ছাত্রলীগের এক পক্ষ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী এবং অপরটি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সমর্থক। রাতের ঘটনার জের ধরে ৩০ অক্টোবর দুপুরে মাহাদি জে আকিবের ওপর হামলা হয়। ঘটনার পর কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এ ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছিল।