নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় বিএনপির নির্বাচনী প্রচারণায় কয়েকটি স্থানে আওয়ামী লীগের কর্মীদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি হামলা ও সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় একাধিক নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শটগান থেকে ২৮টি গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় বিএনপির ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রগুলো জানায়, শনিবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে নোয়াখালী-৪ (নোয়াখালী সদর-সুবর্ণচর) আসনের বিএনপির প্রার্থী মো. শাহজাহান দলীয় নেতা-কর্মীদের মোটরসাইকেল বহর নিয়ে গণসংযোগে সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নের চরহাসান ভূঁইয়ারহাটে যান। সেখানে প্রচারণা চালানোর সময় একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের পাল্টাপাল্টি হামলা-সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এরপর বিএনপির কর্মীরা ইউনিয়নের কাঞ্চন বাজারে নৌকার নির্বাচনী কার্যালয় এবং কয়েকটি দোকানপাটে ভাঙচুর চালায়। এরপর বিএনপির নেতা-কর্মীরা বেলা দেড়টার দিকে চর জুবলী ইউনিয়নের উত্তর কচ্ছপিয়া এলাকায় জেলা বিএনপির সহসভাপতি এ বি এম জাকারিয়ার বাড়ির সামনে সড়কের ওপর জড়ো হন। এ সময় পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা সেখানে গেলে বিএনপির কর্মীরা ইটপাটকেল ছোড়েন। তখন পুলিশ শটগান থেকে গুলি ছুড়ে বিএনপির কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে জেলা বিএনপির সহসভাপতি এ বি এম জাকারিয়া, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মাহবুব আলমগীর, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আজগর উদ্দিনসহ ১৬ জনকে আটক করে। এ ছাড়া বিএনপি কর্মীদের শো-ডাউনে ব্যবহৃত ৮০টি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, পাল্টাপাল্টি হামলা ও গুলির ঘটনায় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। এদিকে বিএনপির দাবি, পুলিশের ছররা গুলিতে তাদের আটজন আহত হয়েছেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রোকনুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির কর্মীরা লাঠিসোঁটা হাতে বিপুলসংখ্যক মোটরসাইকেলের শো-ডাউন থেকে ভূঁইয়ারহাট, কাঞ্চন বাজারসহ কয়েকটি স্থানে নির্বাচনী কার্যালয় ও দোকানপাটে হামলা-ভাঙচুর চালায়। খবর পেয়ে তাঁরা উত্তর কচ্ছপিয়া এলাকায় গেলে লাঠিসোঁটা নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা চালাতে উদ্যত হয়। তখন পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বিজিবির সদস্যরা তাঁদের সহায়তা করেন।
বিএনপির প্রার্থী মো. শাহজাহান অভিযোগ করেন, তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনী গণসংযোগ করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিনা উসকানিতে হামলা চালায়। পরে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরাও বিএনপির কর্মীদের ওপর হামলা চালান ও গুলি ছোড়েন। বিএনপির কেউ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর কিংবা অগ্নিসংযোগ করেননি বলে দাবি করেন মো. শাহজাহান।
অপরদিকে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, বিএনপির গণসংযোগে হামলার অভিযোগ ভিত্তিহীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির প্রার্থীর গণসংযোগ থেকে লাঠিসোঁটা ও অস্ত্রধারী কর্মীরা ভূঁইয়ারহাট ও কাঞ্চনবাজারে নৌকার নির্বাচনী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করেন এবং আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীকে আহত করেন।
সুবর্ণচরের চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির প্রার্থী কয়েক শ কর্মী ও মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে প্রচারণাকালে চেউয়াখালি, ভূঁইয়ারহাট, কাঞ্চনবাজারে নৌকার সমর্থকদের মারধর করে এবং একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে উত্তর কচ্ছপিয়া এলাকায় অবস্থান নেন। তাঁরা সেখানে গেলে তাঁদের ওপরও হামলা হয়। এ সময় শটগান থেকে ২৮টি গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
ওসি নিজাম উদ্দিন বলেন, ঘটনাস্থল থেকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ১৬ জন নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি কর্মীদের ফেলে যাওয়া ৮০টি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত।