সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেছেন, ‘সুন্দরবন বিশ্বের সম্পদ। এটিকে রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু সুন্দরবনের প্রকৃতির স্বার্থ বাদ দিয়ে সরকার ভূরাজনৈতিক ব্যবসায়িক ও বাণিজ্যিক স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছে।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি আয়োজিত এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বাপার সভাপতি সুলতানা কামাল। আজ সোমবার সকালে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
সুন্দরবন নিয়ে জাতিসংঘের বিজ্ঞান, শিক্ষা ও ঐতিহ্যবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সভার সুপারিশ নিয়ে আজকের সংবাদ সম্মেলন হয়। ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সভাটি ১৬ জুলাই শুরু হয়। শেষ হবে ২৪ জুলাই। আজকের সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সভার বিষয়ে প্রায় সব বক্তাই তাঁদের হতাশা ব্যক্ত করেন। এই কমিটিকে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে বলেও অভিমত দেন একাধিক বক্তা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা জানান, বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সভায় সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় থাকবে কি না, সে সিদ্ধান্ত আগামী বছর নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এবার আশঙ্কা ছিল, বাংলাদেশ শর্তগুলো পূরণ না করলে সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে বিপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্য বা লাল তালিকাভুক্ত করা হবে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সুন্দরবনের আশপাশে নানা স্থাপনা নিয়ে বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির উদ্বেগ ছিল। কিন্তু ইউনেসকোর বিশেষজ্ঞ কমিটি তাদের খসড়া প্রস্তাবে এ বছর সিদ্ধান্ত না নেওয়ার সুপারিশ করে বলেছে, আগামী সম্মেলনের আগে বাংলাদেশকে তার অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। ওই সভায় চীন, রাশিয়া, মিসরসহ নানা দেশ বাংলাদেশের সমর্থনে কথা বলে। ২০২২ সালের জুলাইয়ে রাশিয়ায় বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির আগামী সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশকে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে আগামী বছর ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে।
সংবাদ সম্মেলনে সুলতানা কামাল বলেন, ‘এবারের সভায় সুন্দরবন নিয়ে আমাদের উদ্বেগগুলো লঘু করে দিতে সরকার জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছে। এর পেছনে ভূরাজনৈতিক স্বার্থ কাজ করেছে। তবে আমরা হতাশ নই। সুন্দরবন রক্ষায় লড়াই চালু থাকবে। এখানে দেশের মানুষের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের সমর্থন দরকার। কারণ, সুন্দরবন বৈশ্বিক সম্পদ।’
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে দেশের মানুষের সমর্থন পায়নি সরকার। তারা বিশ্বের নানা দেশের সমর্থন আদায়ে সচেষ্ট হয়েছে। এই লবিংয়ের টাকা তারা কোত্থেকে পাচ্ছে?
রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, বাংলাদেশের পক্ষে যখন ভারত, চীন বা রাশিয়া দাঁড়ায়, তখন এ নিয়ে প্রশ্ন থাকে। কেননা, এসব দেশের প্রতিটিরই বাংলাদেশে জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ আছে। এখানে ‘স্বার্থের দ্বন্দ্ব’ বা কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের কারণে এসব দেশ সপক্ষে দাঁড়াতে পারে না।
আজকের সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল। বক্তব্য দেন পরিবেশবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ওয়াচেন প্রধান স্টেফান দোম্পকে, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী পরিবেশবিদ ও গবেষক সাজিদ কামাল, বাপার সহসভাপতি আবদুল মতিন প্রমুখ।