সুন্দরবনে উপদ্রব কমান: সুলতানা কামাল

সুলতানা কামাল
ফাইল ছবি

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেছেন, সুন্দরবনের মতো অনন্য প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। সুন্দরবন বাঁচলে বাঘ বাঁচবে, বাঘ বাঁচলে সুন্দরবন বাঁচবে। এর ওপর উপদ্রব কমাতে হবে। এর সুরক্ষায় সচেষ্ট হতেই হবে।

আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার আয়োজিত এক ওয়েবিনারে কথাগুলো বলেন সুলতানা কামাল। ‘বাঘ দিবসে বাঘের গল্প’ শীর্ষক এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। আজকের আয়োজনে বন্য প্রাণী ও বাঘ বিশেষজ্ঞ, গবেষক, সুন্দরবনের বনজীবী ও পরিবেশবাদীরা অংশ নেন।

বাপার সভাপতি সুলতানা কামাল বলেন, আজ থেকে এক দশক আগে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা নিয়ে শুভংকরের ফাঁকি দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘বাঘ আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ। বাঘের সঙ্গে অনেক সম্প্রদায়ের মানুষের আধ্যাত্মিকতার যোগ আছে। এসব যোগসূত্র এবং সংস্কৃতির বন্ধনকে স্বীকার করা হয় না। সুন্দরবন ও বাঘকে একটি বৃহৎ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখার ও গুরুত্ব দেওয়ার মতো মানসিকতা নীতিনির্ধারকদের মধ্যে প্রকটভাবে অনুপস্থিত।’

সুন্দরবন, বাংলাদেশের জীববৈচিত্রের সবচেয়ে বড় আধারই শুধু না, প্রাকৃতিক রক্ষাকবচও

মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, ‘সুন্দরবনকে ধ্বংস করার নানা আয়োজন চলছে। যেনতেনভাবে শিল্প স্থাপন, প্রবৃদ্ধি বাড়ানো—এই হয়ে গেছে আমাদের মূলমন্ত্র। এই মানসিকতা বাদ দিতে হবে। নতুন প্রজন্মকে বন্য প্রাণীর প্রতি সহনশীল হিসেবে তৈরি করতে হবে।’

আজকের সভায় জাহাঙ্গীরনগর বিম্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খান বলেন, বাঘ সম্পর্কে নানা ভ্রান্ত ধারণা আছে। অনেকে মনে করে, বাঘমাত্রাই মানুষকে আক্রমণ করে। এটা ভুল ধারণা। মানুষখেকো কিছু বাঘ আছে বটে। কিন্তু তার কাছে হরিণও যা, মানুষও তা। সাধারণ বাঘ যদি হয়, তবে মানুষকে দেখে পালিয়ে যাওয়ার কথা।

নিজে ১৪ থেকে ১৫ বার বাঘ দেখেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখেছি বাঘ বড় বড় লাফ দিয়ে সরে গেছে। বিশেষ অবস্থায় সাধারণ বাঘও আগ্রাসী হতে পারে। বাঘ দেখে ভয়ে দৌড় দিলে জন্মগতভাবে পিছু ধাওয়া করায় অভ্যস্ত প্রাণী বাঘ ধাওয়া করবেই।’

অনেকের ধারণা, ছেলে বাঘ সন্তানকে মেরে ফলে। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বাবা তার সন্তানকে রক্ষা করে। কখনো বহিরাগত বাঘ এসে বাঘিনীকে দখল করলে সেই বাঘ বাঘিনীর সন্তানকে মেরে ফেলে এবং তা করে নিজের বংশবিস্তারের স্বার্থে।
মনিরুল খান
খাবার বাঘের জন্য একটি বড় সমস্যা। বাঘের খাবারের মধ্যে ৭০ শতাংশ হলো সুন্দরবনের চিত্রা হরিণ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম এ আজিজ বলেন, সুন্দরবনে বাঘ বাঁচিয়ে রাখতে হলে বন রক্ষার প্রয়োজন। খাবার বাঘের জন্য একটি বড় সমস্যা। বাঘের খাবারের মধ্যে ৭০ শতাংশ হলো সুন্দরবনের চিত্রা হরিণ। ১০ থেকে ১৫ ভাগ বন্য শূকর খায়। এ ছাড়া অন্য প্রাণী খায়। কিন্তু সুন্দরবনে প্রতিবছর ১১ হাজার চিত্রা হরিণ শিকার করে মানুষ। এভাবে চললে বাঘ বাঁচবে কীভাবে?

বাপার জীববৈচিত্র্য, প্রাকৃতিক সম্পদ ও জ্বালানিবিষয়ক কমিটির সহ–আহ্বায়ক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, ‘সুন্দরবন ও বাঘকে রক্ষায় কোনো প্রকল্পের দরকার নেই। শুধু বনকে বনের জায়গায় থাকতে দিন। এর ওপর উপদ্রব বন্ধ করুন। তাহলেই বন রক্ষা পাবে। আর শিশুদের প্রাণিবান্ধব করতে হবে।’

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল। বক্তব্য দেন যমুনা টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মোহসীন-উল-হাকিম, সুন্দরবনের বনজীবী বেলায়েত সরদার, মোংলার ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের সদস্য নান্টু গাজী প্রমুখ।