ঈদের ১০ দিন আগেই রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সুগন্ধি চালের (চিনিগুঁড়া ও বাংলামতী) দাম কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অথচ বাজারে সুগন্ধি চালের সরবরাহে ঘাটতি নেই। এরপরও কেন দাম বাড়ল, তার কোনো যৌক্তিক কারণ বলতে পারেননি চাল ব্যবসায়ীরা, বরং তাঁদের সঙ্গে কথা বলে যা বোঝা গেল, সেটি হচ্ছে প্রতিবার ঈদের আগে চিনিগুঁড়া ও বাংলামতী চালের দাম বাড়ে। ফলে নিয়মের ব্যতিক্রম কিছু হয়নি!
সুগন্ধি চালের দাম নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজার, তেজতুরী বাজার ও কারওয়ান বাজারের নয়জন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা সুগন্ধি চালে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০০-১৫০ টাকা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। যে কারণে খুচরা ব্যবসায়ীরাও দাম বেশি নিচ্ছেন।
মহাখালী কাঁচাবাজারের মুদিদোকানি মো. আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ঈদ এবং এর পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে চিনিগুঁড়া ও বাসমতী চালের চাহিদা কিছুটা বেড়ে যায়। মূলত এ কারণে পাইকারিতেই সুগন্ধি চালের দাম বেড়ে গেছে।
দক্ষিণ মহাখালীর বাসিন্দা গৃহিণী আনোয়ারা বেগম বলেন, গত সপ্তাহেও দুই কেজি পোলাওয়ের চাল তিনি ২০০ টাকায় কিনেছিলেন। গতকাল তাঁকে কিনতে হয়েছে ২১০ টাকা। তিনি বলেন, বাজারে অন্য চালের দাম আগের মতোই রয়েছে।
মহাখালী কাঁচাবাজারে পোলাওয়ের চাল হিসেবে বিক্রি করা চিনিগুঁড়া (খোলা) ১০৫ থেকে ১০৮ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও দাম ছিল ১০০-১০২ টাকা। আর বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোড়কজাত পোলাওয়ের চালের কেজি এক সপ্তাহ আগে ছিল ১১০-১১৫ টাকা। এই চাল গতকাল খুচরা দোকানে বিক্রি হয়েছে ১২০-১২৫ টাকায়। এ ছাড়া কেজিতে ৫ টাকা বাড়িয়ে খুচরা দোকানে খোলা বাসমতী চাল (বাংলা) বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়। তবে মোড়কজাত ভারতীয় বাসমতী চালের কেজি ২৪০-২৬০ টাকা। আর পাকিস্তানি বাংলামতী চালের প্রতি কেজির প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়।
দক্ষিণ মহাখালীর বাসিন্দা গৃহিণী আনোয়ারা বেগম বলেন, গত সপ্তাহেও দুই কেজি পোলাওয়ের চাল তিনি ২০০ টাকায় কিনেছিলেন। গতকাল তাঁকে কিনতে হয়েছে ২১০ টাকা। তিনি বলেন, বাজারে অন্য চালের দাম আগের মতোই রয়েছে।
সাধারণত বোরো মৌসুমে চালের দাম স্থিতিশীল থাকে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে বিআর-২৮ (মাঝারি চাল হিসেবে পরিচিত) খুচরামূল্য ছিল ৪৮-৫০ টাকা কেজি। মাসখানেক ধরে দাম একই রয়েছে। আর সরু চাল হিসেবে পরিচিত মিনিকেট বিক্রি হচ্ছিল ৬৫-৬৬ টাকায়, নাজিরশাইলের দাম ছিল ৬৮-৭০ টাকা। মাসখানেক ধরে এই দামেই বিক্রি হচ্ছে।
গত ২১ মার্চ প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চিনির পাইকারি দাম ছিল ৩ হাজার ৬৫০ টাকা। বুধবার (গতকাল) কিনতে হয়েছে ৩ হাজার ৮২০ টাকায়। সঙ্গে বস্তাপ্রতি আরও ২০ টাকা খরচ। এই হিসাবে পাইকারিতেই প্রতি কেজি চিনির দাম পড়ছে ৭৬ টাকা ৮০ পয়সা। খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা।তেজতুরী বাজারের মুদিদোকানি শাহ আলম
সুগন্ধি চালের পাশাপাশি বাজারে ঘি ও চিনির দাম বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা চিনির দাম কেজিতে ২ টাকা এবং ঘিয়ের দাম মানভেদে ৩০-৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ের তেজতুরী বাজারের মুদিদোকানি শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, গত ২১ মার্চ প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চিনির পাইকারি দাম ছিল ৩ হাজার ৬৫০ টাকা। বুধবার (গতকাল) কিনতে হয়েছে ৩ হাজার ৮২০ টাকায়। সঙ্গে বস্তাপ্রতি আরও ২০ টাকা খরচ। এই হিসাবে পাইকারিতেই প্রতি কেজি চিনির দাম পড়ছে ৭৬ টাকা ৮০ পয়সা। খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ‘মনা দধি স্টোরে’ দুই ধরনের ঘি (খোলা) বিক্রি হয়। মাঝারি মানের ঘিয়ের কেজি ৬০০ টাকা, ভালো মানের ঘিয়ের দাম পড়ে ৯০০ টাকা।
মনা দধি স্টোরের মালিক মনা মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, মাসখানেক ধরেই ঘিয়ের দাম একটু একটু করে বাড়ছিল। তবে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি ঘিয়ের দাম অন্তত ৩০ টাকা বেড়েছে। চাহিদা আগের তুলনায় কিছুটা বেড়ে যাওয়াতেই দাম বেড়েছে।
তবে বাজারে গরু ও খাসির মাংসের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা কমেছে। যদিও মুরগির দাম বেড়েছে। মহাখালী কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০-১৭৫ টাকায় এবং সোনালিকা (কক) মুরগি ২৯০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে ব্রয়লার মুরগি ১৬০-১৬৫ এবং সোনালিকা ২৭০-২৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে গরুর মাংস ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকা, খাসির মাংস ৯০০ থেকে ৯২০ টাকা এবং ছাগলের মাংস ৮০০-৮২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এখন।