নব্বইয়ের দশকের আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী শেখ মো. আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম আর মাত্র একটি মামলায় খালাস পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। প্রায় দুই দশক ধরে তিনি কারাগারে আছেন।
১৮ বছর আগে আসলাম যখন গ্রেপ্তার হন, তাঁর নামে ঢাকার বিভিন্ন থানায় তখন চাঁদাবাজি, খুন, অবৈধ অস্ত্র বহনের অভিযোগে অন্তত ১২টি মামলা ছিল। এর মধ্যে ১১টি মামলাই নিষ্পত্তি হয়ে গেছে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন। বাকি আছে তেজগাঁওয়ের যুবলীগের নেতা গালিবকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে করা মামলাটি। এই মামলায়ও যদি তিনি খালাস পান, তাহলে তাঁর কারামুক্ত হতে আর কোনো বাধা থাকবে না।
তবে আসলামের মুক্তির ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে পুলিশ বিভাগ। ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘তার মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষী পাওয়া যায় না। এ জন্য প্রায় সবগুলো থেকেই খালাস পেয়ে গেছে। সরকার চায় না এই শীর্ষ সন্ত্রাসী পালিয়ে থাকুক, এ ব্যাপারে জেল কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হয়েছে। আমরা অত্যন্ত সতর্ক রয়েছি।’
সূত্র জানায় সুইডেন আসলামের মুক্তির ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশ কারা প্রশাসনের মহাপরিদর্শককে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়, ‘সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে থাকা ১২টি মামলার মধ্যে ১১টি মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন। একটি মামলা বিচারাধীন আছে। ওই মামলার নিষ্পত্তি সাপেক্ষে তিনি মুক্তি পেলে তাঁর অতীত বিবেচনায় তাঁকে পর্যবেক্ষণের আওতায় আনতে হবে। আসলাম কুখ্যাত সন্ত্রাসী হওয়ায় তাঁর মুক্তি জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে তা পুলিশকে যথাসময়ে অবহিত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে।’
চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ঘোষিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর একজন সুইডেন আসলাম। ১৯৮৬ সালে ফার্মগেটের পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে মায়ের হাত ধরে থাকা কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক খুনের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠতে থাকে। এক পর্যায়ে কিছুদিন তিনি সুইডেনে অবস্থান করেন। সেখান থেকে ফিরে আসার পর ‘সুইডেন’ শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়।
পুলিশের নথিপত্র থেকে দেখা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে সর্বশেষ মামলা হয় তেজগাঁওয়ের যুবলীগের নেতা গালিব হত্যার ঘটনায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। বর্তমানে দ্বিতীয় বিশেষ দায়রা জজ আদালতে মামলাটি বিচারাধীন। এ মামলার ২৪ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত পুলিশ মাত্র ১৪ জনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। এই একটি মামলাতেই তাঁর জামিন হয়নি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, হত্যা ও হত্যাচেষ্টার চারটি মামলায় আসলাম আদালত থেকে খালাস পেয়েছেন। তবে এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেনি। একটি মামলায় পেয়েছেন অব্যাহতি। অস্ত্র আইনের দুটি মামলায় তাঁর যাবজ্জীবন এবং ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়। পরে এসব মামলায় তিনি উচ্চ আদালত থেকে অব্যাহতি পান।
গ্রেপ্তারের পর থেকে দীর্ঘদিন কাশিমপুর কারাগারে আছেন সুইডেন আসলাম। অভিযোগ, গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি জেলে বন্দী থাকা অবস্থায় গত বছরের মার্চ মাসে কারা অধিদপ্তরের একটি দল অভিযান চালিয়ে তাঁর কাছ থেকে দুটি মুঠোফোন উদ্ধার করে। কারাগার থেকেই মুঠোফোনে অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। কারাগারে থেকে তিনি রাজনীতিক, ব্যবসায়ী এমনকি প্রশাসনের বেশ কয়েকজন কর্তাব্যক্তির সঙ্গে নিয়মিত কথাও বলেন। একটি গোয়েন্দা সংস্থা তাঁর মুঠোফোনে আড়ি পেতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায়। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গোয়েন্দা সংস্থা থেকে তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনের কলের তালিকাসহ গোপন প্রতিবেদন ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে পাঠায়। পূর্ব রাজাবাজারের সুমন ওরফে চাংখা সুমন ওরফে কিলার সুমন, ব্যাটারি বাবু ওরফে কিলার বাবু, মণিপুরীপাড়ার বিআরটিসি কোয়ার্টারের আমজাদ হোসেন, পূর্ব রাজাবাজারের বাবু এবং কলাবাগানের সাবু আসলাম বাহিনীর সদস্য বলে পুলিশের নথিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।