করোনার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গঠিত 'জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি' বলেছে, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা হলো রোগ সংক্রমণের হার সুনির্দিষ্টভাবে না কমার আগে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চালু করলে রোগের হার বাড়ার আশঙ্কা থাকে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রযোজ্য বিধি–বিধানগুলো সঠিক পদ্ধতিতে প্রয়োগ না করে শিথিল করা হলে রোগীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
আজ বৃহস্পতিবার কমিটির ষষ্ঠ সভায় এই কথা বলা হয়। পরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কমিটির ষষ্ঠ সভার সুপারিশ জানানো হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সই করেন কমিটির সভাপতি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ এবং সদস্য সচিব সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ একটি সংক্রামক রোগ, যা হাঁচি-কাঁশি ও সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়। জনসমাগম এ রোগের বিস্তারের জন্য সহায়ক। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা এই যে রোগ সংক্রমণের হার সুনির্দিষ্টভাবে না কমার আগে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চালু করলে রোগের হার বাড়ার আশঙ্কা থাকে। কমিটি এ বিষয়ে ইতিপূর্বে (৭ মে) পরামর্শ দিয়েছে।
উল্লেখ আজই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আদেশ জারি করে জানিয়েছে, শর্ত সাপেক্ষে ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত সীমিত আকারে সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিসগুলো নিজ ব্যবস্থায় খোলা থাকবে। এই সময়ে শর্ত মেনে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্টসংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান ও রেল চলাচল করতে পারবে। নিজ ব্যবস্থাপনায় বিমান চলাচলের বিষয়ে বিমান কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করবে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আপাতত বন্ধই থাকছে।
একই দিনে জাতীয় পরামর্শক কমিটির পক্ষ থেকে এমন সুপারিশ এল। এ ছাড়া কমিটি হাইড্রোক্সি-ক্লোরোকুইন ওষুধ কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসার নির্দেশমালায় না রাখার পরামর্শ দিয়েছে। কমিটি বলেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সুর্নিদিষ্টভাবে হাইড্রোক্সি- ক্লোরোকুইন নামের ওষুধ ব্যবহারের ঝুঁকি সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছে। ইতিমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নে এই ওষুধের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এ ছাড়া আইভারমেকটিন,কনাভালোসেন্ট প্লাজমা ও অন্যান্য অননুমোদিত ওষুধ কেবলমাত্র সুনির্দিষ্টভাবে অনুমোদিত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের বাইরে ব্যবহার না করার সুপারিশ করেছে কমিটি। এরই ধারাবাহিকতায় এই সমস্ত বা ব্যবস্থা চিকিৎসা বা প্রতিরোধে সাধারণ মানুষের জন্য ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি।
কোভিড-১৯ ও অন্যান্য রোগীর চিকিৎসায় একই হাসপাতালে পৃথক ব্যবস্থায় করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে নির্দেশনা দিয়েছে পরামর্শক কমিটি সেটিকে সঠিক বলে মনে করছে। তবে এ ব্যাপারে প্রশাসনিক, সাংগঠনিক,জনবল ও সরঞ্জামগুলোর বিশেষ প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে বলে কমিটি মনে করে।
উল্লেখ্য, দেশে করোনাভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার গত ১৮ এপ্রিল ১৭ সদস্যের 'জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি' গঠন করে।