আশঙ্কা ছিল ঈদের ছুটির পর সংক্রমণ বাড়বে। সেই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
ঈদের ছুটির পরপরই করোনা সংক্রমণ বাড়তে দেখা যাচ্ছে। সীমান্তবর্তী সাত জেলায় এই প্রবণতা বেশি। সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে, তা বুঝতে হলে আরও সপ্তাহখানেক অপেক্ষা করতে হবে। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চলমান কাজগুলো জোরদার করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যশোর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সিলেটে—এই জেলাগুলোতে সংক্রমণ কিছুটা বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। সীমান্তবর্তী এই জেলাগুলোতে সংক্রমণ বেশি হওয়ার সঙ্গে ভারতে যাতায়াতের একটি সম্পর্ক থাকতে পারে।’ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথম আলোর রাজশাহী প্রতিনিধিকে জানিয়েছে, গতকাল শনিবার সকালে হাসপাতালে ১৪৬ জন করোনা রোগী ভর্তি ছিলেন, এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা ৭৭ জন।
গতকাল ৩৮ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১১ হাজার ৯২০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ২৮ জনের। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৪১ শতাংশ।
ঈদের ছুটি শেষ হয়েছে গত সপ্তাহে। ঈদের ছুটিতে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করে লাখ লাখ মানুষ যানবাহন ব্যবহার করেছে, ফেরি পার হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ থেকে মানুষ সারা দেশের গ্রাম ও ছোট শহরে গেছে। জনস্বাস্থ্যবিদেরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ঈদের পর সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে।
সরকারি তথ্যে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সপ্তাহে রোগী শনাক্তের হার ৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। এই সময়ে নমুনা পরীক্ষাও বেড়েছে ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
ঈদের ছুটির আগেই দেশে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয়েছিল। এই ভারতীয় ধরনের সংক্রমণ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বেশি বলে বিজ্ঞানী ও জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলেছিলেন। তাঁরা এ-ও বলেছিলেন, ঈদের ছুটির পর ভারতীয় ধরনের কারণে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক মোহাম্মদ রোবেদ আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংক্রমণ পরিস্থিতির ওপর আমরা নজর রাখছি। পরিস্থিতি কতটা ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে, তা বুঝতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লেগে যাবে।’
সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা হাসপাতালে ১০ হাজারের বেশি সাধারণ শয্যা অনেক খালি থাকছে। আইসিইউ শয্যা খালি থাকছে ৮০০-এর ওপর। হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহব্যবস্থা উন্নত করা হয়েছে।
অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলা থেকে জরুরি রোগী পার্শ্ববর্তী বড় জেলায় বা বিভাগীয় শহরে দ্রুত আনার প্রস্তুতি নিতে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্থলবন্দর দিয়ে যাঁরা আসছেন, তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হচ্ছে। তবে এসব এলাকায় মাস্কের ব্যবহার বাড়াতে সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জনদের বলা হয়েছে। গতকাল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে রাজশাহী সদর আসনের সাংসদ ও পর্ষদের সভাপতি ফজলে হোসেন বাদশা প্রথম আলোকে বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোগীর চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সীমান্তে বিজিবি ও পুলিশি নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বৈধভাবে যে মানুষগুলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে, তাঁদের পরীক্ষারও কোনো ব্যবস্থা নেই। এটা উদ্বেগের বিষয়।
জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের মতো বড় শহরগুলোতে মাস্কের ব্যবহার বাড়াতে হবে। মানুষ যেন মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে না আসে, সে ব্যাপারে কড়াকড়ি পদক্ষেপ নিতে হবে।