চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএনপির প্রার্থী ইসহাক চৌধুরীর ভাই আমজাদ হোসেনের গাড়ি থেকে পাইপগান ও পেট্রলবোমা তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গতকাল মঙ্গলবারের পেট্রলবোমা ছোড়া ও আজকের অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা সাজানো।
গতকাল সীতাকুণ্ডের মাদামাবিবিরহাটে পেট্রলবোমা হামলায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ৩ কর্মী দগ্ধ হয়েছিলেন । আওয়ামী লীগের দাবি, বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাদের ওপর ওই হামলা চালিয়েছিল।
আজ বুধবার দুপুরে নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করেন চট্টগ্রাম-৪ আসনের (সীতাকুণ্ড এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড ০৯ ও ১০) বিএনপির প্রার্থী ইসহাক চৌধুরী। সেই সংবাদ সম্মেলন চলার সময় তাঁর বাসার পাশে সড়কে তাঁর ভাই আমজাদ হোসেন চৌধুরীর গাড়ি তল্লাশি করা হয়। পুলিশ বলছে, ওই গাড়িতে একটি পাইপগান ও পেট্রলবোমা তৈরির কাজে ব্যবহৃত ১৯টি বোতল পাওয়া যায়। এ ঘটনায় গাড়ির চালক মেহেদী হাসান তারেককে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, গাড়িটি জলিল টেক্সটাইল সড়ক ধরে মহাসড়কের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় কিছু লোক গাড়িটি থামিয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পরে টহলে থাকা পুলিশ গাড়ি থেকে বোতলগুলো জব্দ করে। সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাব্বারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুপুরে বিএনপি প্রার্থীর বাসায় সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। তাদের কাছে খবর ছিল জলিল গেট এলাকায় দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হতে পারে। সে জন্য পুলিশের সদস্যরা ওই এলাকার কাছাকাছি ছিল। এ সময় সংবাদ পেয়ে ওই গাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১৯টি পেট্রলবোমা তৈরির সরঞ্জাম বোতল, একটি পাইপগান উদ্ধার করা হয়। ঘটনার সময় ইসহাক চৌধুরী জলিল গেট এলাকার তার বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছিলেন।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক তফাজ্জল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সাংবাদিকেরা তাঁদের প্রার্থীর বাড়িতে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের লোকজন বাড়িটি ঘেরাও করে রাখে। এ সময় আমজাদ হোসেন চৌধুরীর গাড়িটি সাংবাদিকদের জন্য নাশতা আনতে আনতে যাচ্ছিল। এমন সময় আওয়ামী লীগের কয়েকজন লোক গাড়িটি আটকে চালককে একটি দোকানে নামিয়ে দেন। পরে পুলিশ গিয়ে পেট্রলবোমা পেয়েছে দাবি করে গাড়িটি জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়।
বিএনপি প্রার্থীর বাড়ি ঘেরাও রাখার বিষয়টি অস্বীকার করে সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলওয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পেট্রলবোমার খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়েছিল।
ভাটিয়ারি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, পেট্রলবোমার সরঞ্জাম জব্দের সময় আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মী সেখানে ছিলেন না। খবর পেয়ে কয়েকজন সেখানে গেছেন। বাড়ি ঘিরে রাখার প্রশ্নই ওঠে না।
ইসহাক চৌধুরীর সংবাদ সম্মেলন
সংবাদ সম্মেলনে ইসহাক চৌধুরী বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে তাঁদের ১০০ নেতা-কর্মীকে পরোয়ানা ছাড়াই পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। পরে তাঁদের কাউকে গায়েবি মামলা, কাউকে ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। ২০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কোন্দলে একপক্ষের লোকজন গজারিয়া দিঘির পাড়ে আওয়ামী লীগের প্রচার কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুন দিলেও মামলায় ৯০ জন বিএনপি নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। ২৫ ডিসেম্বর মাদামবিবিরহাটে বিএনপির নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে ককটেল ও পেট্রলবোমা ছোড়েন আওয়ামী লীগের লোকজন। পেট্রলবোমা ছুড়তে গিয়ে নিজেদের হাত নিজেরা পুড়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর দোষ চাপিয়ে দেন। পুলিশ প্রতিদিন রাতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছে।
এদিকে মাদামবিবিরহাটের জাহানাবাদে বিএনপি-আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে পেট্রলবোমা হামলায় তিনজন দগ্ধসহ আওয়ামী লীগের ছয় নেতা-কর্মী আহত হওয়ার ঘটনায় ১৭৩ জনের নাম উল্লেখসহ মোট ২১৩ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। গতকাল মধ্যরাতে ওই হামলায় আহত উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম সাহেদ মামলাটি করেন।