করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে মারা যান সাবেক এক মাদ্রাসা প্রধান (৬৩)। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা এই তথ্য গোপন করে লাশ মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে এনে দাফন করেছেন। বিষয়টি জানতে পেরে শুক্রবার দুপুরে ওই ব্যক্তির গ্রামটি লকডাউন করেছে প্রশাসন।
নিহত ব্যক্তি সিরাজদিখান উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের পশ্চিম শিয়ালদী এলাকার বাসিন্দা। তিনি ঢাকায় বাসা ভাড়া করে থাকতেন। সিরাজদিখানের একটি মাদ্রাসার সাবেক মুহতাতিম (মাদ্রাসা প্রধান) তিনি। বুধবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে মারা যান তিনি।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বুধবার ওই ব্যক্তি ঢাকার ভাড়া বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বজনেরা তাঁকে প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেন। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা উপসর্গ দেখে ধারণা করেন, তিনি করোনায় আক্রান্ত। তাঁকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠান। সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। স্বজনেরা হাসপাতালের কাউকে না জানিয়ে লাশ নিয়ে চলে আসেন সিরাজদিখানের পশ্চিম শিয়ালদী গ্রামে। করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে হাসপাতালে ভর্তিসহ পুরো বিষয়টি গোপন রাখা হয়। ফলে বৃহস্পতিবার জানাজা ও দাফনের সময় অনেক লোকসমাগম ঘটে।
মারা যাওয়া ব্যক্তির এক ভাতিজা বলেন, তাঁর চাচা দীর্ঘদিন ধরে ডায়বেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছিলেন। এতে তাঁরা ভেবেছিলেন, তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাননি। তাই জানাজা ও লাশ দাফনের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো নিয়ম মানা হয়নি। কিন্তু পরে জানতে পেরেছেন, তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে থাকার সময় চিকিৎসকেরা ওই ব্যক্তির দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। পরে পরীক্ষায় ধরা পড়েছে তিনি করোনা ‘পজিটিভ’ ছিলেন। বিষয়টি বৃহস্পতিবার রাতে গ্রামবাসী জানতে পারেন। ফলে জানাজা ও দাফনে অংশ নেওয়া লোকজনসহ গ্রামের সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. বদিউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমে ওই মৃত ব্যক্তি করোনায় আক্রান্তের সন্দেহভাজন ছিলেন। পরিবারের লোকজন বিষয়টি গোপন রেখে লাশ দাফন করেছে। নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরে জানা যায়। তাতে দেখা গেছে, ওই ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। মৃত ব্যক্তির সংস্পর্শে যারা গিয়েছিলেন, তাঁদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছে। যেকোনো প্রয়োজনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।
সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশফিকুনাহার প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি বৃহস্পতিবার রাতে জানার পরপরই ওই ব্যক্তির বাড়িটি লকডাউন করা হয়। আজ শুক্রবার পুরো গ্রাম লকডাউন করা হয়েছে। জানাজা ও দাফনে উপস্থিত ব্যক্তিদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে শনাক্ত করে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আর লাশের গোসল করানো ব্যক্তিটি নারায়ণগঞ্জে থাকেন। তাঁকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।