সিনহার পোস্টার লাগানোর লোক নেই!

বিচ্ছিন্নভাবে ধানের শীষের কিছু পোস্টার চোখে পড়ে। ছবি: প্রথম আলো
বিচ্ছিন্নভাবে ধানের শীষের কিছু পোস্টার চোখে পড়ে। ছবি: প্রথম আলো

গোলাপি রঙের দোতলা সুদৃশ্য বাড়ি। বাড়ির সামনের অংশজুড়ে ফুলের বাগান। হলুদ রঙের গাদা ফুলের আধিক্য বাগান জুড়ে। বাড়ির ঠিক সামনে বসার স্থান। একখানা কাচের টেবিল। তবে বাড়ি আর বাগানের মতো জৌলুস নেই ধুলোমাখা টেবিলটায়। বাড়ির মালিক বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মিজানুর রহমান সিনহা। তিনি মুন্সিগঞ্জ-২ (লৌহজং ও টঙ্গিবাড়ী) আসনে বিএনপির প্রার্থী।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র চার দিন বাকি। প্রার্থীর বাড়ি লোকে লোকারণ্য থাকার কথা, প্রার্থীকে সবকিছু সামাল দিতে ব্যস্ত থাকার কথা। কিন্তু সেখানে এর লেশ মাত্র নেই। বাড়িটি দেখে বোঝার উপায় নেই, এ বাড়ির কেউ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। আশপাশে নেই কোনো পোস্টার। গত সোমবার লৌহজংয়ে গিয়ে দেখা যায় এ চিত্র।

বিএনপির প্রার্থী মিজানুর রহমান সিনহার বাড়িতে নির্বাচনী কোনো ব্যস্ততা নেই। ছবি: প্রথম আলো

বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী লেবু মিয়া জানালেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর মিজানুর রহমান সিনহা একদিনের জন্যও বাড়িতে আসতে পারেননি। বাড়ির সামনে কিংবা আশপাশের সড়কে মিজানুর রহমান সিনহার ধানের শীষের পোস্টার নেই কেন জানতে চাইলে নিরাপত্তারক্ষী বললেন, ‘স্যার, চাইলেও আসতে পারছেন না। আসতে গেলে হামলা হয়। রোববারও স্যারের ওপর হামলা হয়েছে। স্যারের পোস্টার কে লাগাবে ?’

বাড়ির সামনের সড়কে দেখা গেল ওই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাংসদ সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলির পোস্টার। এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কিছু জায়গায় ধানের শীষের পোস্টার ঝুলানো আছে।

মিজানুর রহমান সিনহার বাড়ির আরেকজন নিরাপত্তারক্ষী জানালেন, এ বাড়িতে বিএনপির কোনো নেতা কর্মী আসেন না। মিটিং হয় না।

এলাকা জুড়ে চোখে পড়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলির পোস্টার। ছবি: প্রথম আলো

মিজানুর রহমান সিনহা একদিনের জন্যও কী ভোট চাইতে যাননি? জবাবে ওই নিরাপত্তারক্ষী বললেন, ‘স্যার, একদিনের জন্যেও ভোট চাইতে যাননি।’ মিজানুর রহমান সিনহার বাড়ির কাছের একটি চা দোকানের সামনে থাকা বিএনপির স্থানীয় এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করেন, বিএনপির কেউ বাজারে নেই। প্রায় সব নেতা কর্মী গা ঢাকা দিয়ে আছেন।

মিজানুর রহমান সিনহার বাড়ি হয়ে বালিগাঁও বাজারে আসার পথে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাগুফতার কয়েকটি নির্বাচনী প্রচারকেন্দ্র দেখা গেল। ক্যাম্পে ক্যাম্পে নির্বাচনী গান বাজছে। বালিগাঁও বাজার হয়ে পূর্ব বড়দিয়া থেকে দক্ষিণের শেষ গ্রামটির নাম শামুরবাড়ী। এ গ্রামে থাকেন সাংসদ সাগুফতা ইয়াসমিন। রাস্তায় রাস্তায় দেখা গেল, সাগুফতার পোস্টার। সেখানে মিজানুর রহমান সিনহার পোস্টার দেখা যায়নি।

আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রতীক বিশালকায় নৌকা আলোক সজ্জায় সজ্জিত করা। ছবি: প্রথম আলো

নৌকার প্রার্থী সাগুফতার বাড়িতে যাওয়ার পর দেখা গেল, কয়েকজন নেতা–কর্মী বাড়ির উঠানে বসে আছেন। তাঁদের একজন রাশেদুল ইসলাম। তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। রাশেদুল বললেন, সাংসদ সাগুফতা নির্বাচনী প্রচারে বাইরে আছেন। লৌহজং ও টঙ্গিবাড়ীর বেশির ভাগ সড়ক দিনভর ঘুরে দেখা গেল, প্রায় প্রতিটি বাজারে আছে সাগুফতার নির্বাচনী প্রচারকেন্দ্র। রাতে লৌহজংয়ের কনকসার বাজারে সাগুফতার নির্বাচনী প্রচারকেন্দ্রটি আলোকসজ্জায় সজ্জিত থাকতে দেখা যায়। আর হলমার্কেট বাজারে নির্বাচনী প্রচারকেন্দ্রের সামনে টাঙানো নৌকাটিও আলোক সজ্জা করা।
বালিগাঁও বাজারের এক চা দোকানি বললেন, ‘এবারের ভোট এক পাইলা ভোট। নৌকার লোকজন বাজারে। আর বিএনপির লোকজন আসে না। ভোট চায় না।’