সিঙ্গাপুরে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত বাংলাদেশি কর্মীর অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন। ১২ দিন ধরে সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিজিজের (এনসিআইডি) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে তিনি চিকিৎসাধীন। চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আগে ৩৯ বছর বয়সী এই বাংলাদেশি নাগরিকের ফুসফুসে জটিল প্রদাহ ছিল।
গতকাল বুধবার বিকেলে সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, বাংলাদেশের পাঁচ নাগরিকের মধ্যে প্রথমে আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তির অবস্থা সংকটাপন্ন। তবে তাঁকে সুস্থ করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
গত ডিসেম্বরে চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন গতকাল বলেছে, মঙ্গলবার চীনের ৩১টি প্রাদেশিক অঞ্চলে এই ভাইরাসের সংক্রমণে মারা গেছে ১৩৬ জন। এ নিয়ে চীনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২ হাজার ৪ জন হলো। এ ছাড়া চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে ২৯ দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে। মারা গেছে ছয়জন। আক্রান্তের তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে ইরান।
সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত পাঁচ বাংলাদেশির অবস্থা
৮ ফেব্রুয়ারি নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সিঙ্গাপুরে প্রথম একজন বাংলাদেশির করোনাভাইরাসে আক্রান্তের বিষয়টি চিকিৎসকেরা নিশ্চিত করেন। পরে তাঁকে এনসিআইডিতে পাঠানো হয়। এরপর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে আরও চার বাংলাদেশি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন। এই পাঁচজনই সেলেটার অ্যারোস্পেস হাইটসের নির্মাণশ্রমিক। তাঁরা কখনো চীনে যাননি।
সিঙ্গাপুরের এনসিআইডি কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বাংলাদেশের হাইকমিশনার গতকাল জানান, আক্রান্ত প্রথম বাংলাদেশি গত মঙ্গলবার দিনের শেষ ভাগ থেকে চিকিৎসায় কিছুটা সাড়া দিচ্ছেন। তবে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে থাকা ওই রোগীর শারীরিক অবস্থা কেমন যেতে পারে, এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো আগাম মন্তব্য করতে চাইছে না।
এনসিআইডিতে চিকিৎসাধীন অন্য চার বাংলাদেশির অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। তাঁদের চারজনকেই এনসিআইডির আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। কোয়ারেন্টাইনের ১৪ দিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হবে। সিঙ্গাপুরের কাকি বুকিত এলাকায় একটি ডরমিটরিতে আরও ৯ বাংলাদেশি কোয়ারেন্টাইনে আছেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তাঁদের কাজে যোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। আক্রান্ত প্রথম বাংলাদেশি এই ডরমিটরিতে থাকতেন।
গতকাল সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনও সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত পাঁচ বাংলাদেশিকে নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) একটি বিশেষ বৈঠক উদ্বোধনের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বাংলাদেশি রোগীর বিষয়ে আজ (গতকাল) সকালে ফোনে কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশি এক রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। ৩৯ বছর বয়সী ওই রোগী শ্বাসকষ্টসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন।’ সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুরুতর অসুস্থ বাংলাদেশি রোগীর সুস্থতার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন বলে মন্ত্রী জানান।
>সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত অন্য চার বাংলাদেশির অবস্থা অপরিবর্তিত। চীনে মৃত্যুর সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়েছে।
বাংলাদেশে এখনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কেউ শনাক্ত না হলেও চীন, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের বিষয়ে উদ্বেগ আছে। ‘কোভিড-১৯’ বিষয়ে নিয়মিত সাংবাদিকদের সামনে তথ্য তুলে ধরছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা। তিনি গতকাল জানান, সিঙ্গাপুরের হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ওই বাংলাদেশি দীর্ঘদিন ধরে অ্যাজমায় ভুগছেন। শ্বাসকষ্ট নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পর তাঁর ‘কোভিড-১৯’ শনাক্ত হয়। তবে ‘কোভিড-১৯’ আক্রান্ত অন্য চার বাংলাদেশি ভালো আছেন।
চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে বলা হচ্ছে। তবে এই ভাইরাসের জন্ম ইতিহাস এখনো অজানা, কীভাবে প্রাণী থেকে মানুষে এর সংক্রমণ হয়েছে, তা-ও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়, কত দিন এই ভাইরাস বেঁচে থাকে, তা-ও জানা যায়নি। পাশাপাশি নানা গুজবও ছড়াচ্ছে।
গতকাল সকালে রাজধানীর মহাখালীর নার্সিং অধিদপ্তরের নতুন ভবন উদ্বোধনের সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে একশ্রেণির মানুষ গুজব ছড়াচ্ছে। মুরগির মাংস খাওয়া, মাস্ক ব্যবহার, বিদেশফেরত মানুষ নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে।
গতকালের সংবাদ ব্রিফিংয়েও কোনো ধরনের গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানান আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা। তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯’ বিষয়ে জানতে যে কেউ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করতে পারেন (০১৯২৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯৩৭১১০০১১)।
আইইডিসিআর গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, তাদের গবেষণাগারে এ পর্যন্ত ৭৫ জনের নমুনা (লালা বা রক্ত) পরীক্ষা করা হয়েছে। কারও করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি।