সিইসিকেই অভিযোগের প্রমাণ দিতে হবে: সুজন

সুজনের অনলাইন সংবাদ সম্মেলন
ছবি: সংগৃহীত

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের বিরুদ্ধে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

আজ শনিবার দুপুরে অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সুজনের নির্বাহী সদস্য সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ কথা বলেন। বদিউল আলম মজুমদার সম্পর্কে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ‘মিথ্যাচারের’ প্রতিবাদে সুজন ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সুজন বলেছে, যৌক্তিক সমালোচনার যুতসই জবাব না থাকলে সমালোচনাকারীর চরিত্র হননের অপচেষ্টায় লিপ্ত হওয়া বহুল ব্যবহৃত একটি অপকৌশল। ঠিক এমনই এক অপকৌশল ব্যবহারের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন সিইসি। সিইসিকেই এসব অভিযোগের প্রমাণ দিতে হবে।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বদিউল আলম মজুমদারের ব্যক্তিগত আর্থিক লেনদেনের কোনো সম্পর্ক নেই এবং কোনো দিন ছিলও না। তিনি কমিশন থেকে কখনো কোনো কাজ নেননি, অসমাপ্ত রাখার তো কোনো প্রশ্নই আসে না। অর্থাৎ ড. মজুমদারের বিরুদ্ধে, সিইসির নিজের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কানকথার ভিত্তিতে উত্থাপিত, এক কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ এবং কাজ নিয়ে কাজ না করার অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘সিইসি হুদাকেই এসব অভিযোগের প্রমাণ দিতে হবে। একই সঙ্গে জবাব দিতে হবে: তার কাছে এ সম্পর্কে কোনো রূপ তথ্য থাকলে তিনি কেন তা প্রকাশ করলেন না? কেন অভিযোগটি তদন্ত করলেন না? দুর্নীতি দমন কমিশনেই কেন তা প্রেরণ করলেন না?’

সংবাদ সম্মেলনে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নূরুল হুদার নেতৃত্বে আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা অনেক। রাতকে দিন আর দিনকে রাত করা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তারা সব কাজ করতে পারে। আদালতের রায় আছে, নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ ওঠলে ইসি তদন্ত করতে পারে। তদন্তে সেই অভিযোগ প্রমাণ হলে নির্বাচন বাতিল করতে পারে। কিন্তু তারা কোনোটাই করেনি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ রকম একজন খলনায়ককে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’

সুজন সম্পাদক সিইসির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করবেন কি না, জানতে চাইলে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘একটা বড় প্রশ্ন, আদালতে গেলে রিমেডি পাওয়া যাবে কি না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটা বিবেচ্য বিষয়। তবু আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘অবশ্যই মানহানি হয়েছে। শুধু আমার নয়, পুরো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের মানহানি হয়েছে।’

সুজন কাজ পাওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছে, কথা বলেছে, এমন অভিযোগের বিষয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তিনি বা তাঁর কোনো প্রতিনিধি কাজ পাওয়ার জন্য কখনো সিইসি বা তাঁর প্রতিনিধির কাছে যাননি। কোনো চিঠিও দেননি। তিনি প্রশ্ন রাখেন, চিঠি দেওয়া হলে তা প্রকাশ করা হলো না কেন?

সুজনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, বর্তমান সিইসি নির্বাচন ব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনের যে দুর্নাম জুটিয়েছেন, তার জন্য সিইসির শাস্তি হওয়া উচিত।
আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, ‘সমালোচনার সদুত্তর না থাকলে, কৃতকার্যের কোনো ব্যাখ্যা না থাকলে সমালোচনাকরীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করাটা হচ্ছে সবচেয়ে সহজ পন্থা। এটি একটি নিকৃষ্ট পন্থা, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য অপ্রত্যাশিত ছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি আশ্চর্য হইনি, পাঁচ বছর তিনি এভাবেই কাটিয়েছেন। তাঁর কৃতকাজের বিচার চেয়ে আমরা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের আবেদন করেছিলাম। আজ হোক কাল হোক এ জন্য তাঁকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে বলে আমার বিশ্বাস।’

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, সুজন কারও কাছ থেকে টাকা নেয় না, চায়ও না। নির্বাচন কমিশনের অনুরোধেই কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে সুজন তথ্য প্রচারের কাজ করেছে।

অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন বলেন, কমিশনের কয়েকজন লোক সিইসিকে আর্থিক অনিয়মের কথা বলেছেন। শোনার পর তাঁর উচিত ছিল বিষয়টির তদন্ত করা বা দুদকে পাঠানো। কিন্তু সেটা না করে তিনি কানকথা প্রচার করে বেড়াচ্ছেন। তাতেই বোঝা যায় এটা অসত্য।

সুজনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় হলফনামায় বর্ণিত প্রার্থীদের তথ্য প্রকাশ ও ভোটারদের মধ্যে বিতরণ, পোস্টারিং এবং প্রার্থী-ভোটার মুখোমুখি অনুষ্ঠানের আয়োজনের কাজটি করার জন্য শামসুল হুদা কমিশন ইউএনডিপির অর্থায়নে পরিচালিত এসইএমবি প্রকল্প থেকে সুজনকে ৯ লাখ ৫০ হাজার ৬০০ টাকা দেয়। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় একই ধরনের কাজের জন্য সুজনকে ৩ লাখ টাকা দেয়। অর্থাৎ দুটি নির্বাচনে সর্বমোট ১২ লাখ ৫০ হাজার ৬০০ টাকা সুজন নির্বাচন কমিশন থেকে পায়। নির্বাচন দুটির জন্য নির্ধারিত কাজগুলো যথাযথভাবে সস্পন্ন করে যথাসময়ে কমিশনের কাছে বিল-ভাউচারসহ হিসাব-নিকাশ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে কোনো রূপ অনিয়মের অভিযোগ ওঠা সম্পূর্ণ অমূলক। অথচ কে এম নূরুল হুদা বদিউল আলম মজুমদারের বিরুদ্ধে এক কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন।

লিখিত বক্তব্যে সৈয়দা রিজাওয়ানা হাসান আরও বলেন, ‘সিইসি হুদা আরও অভিযোগ করেছেন যে ড. মজুমদার কমিশন থেকে কাজ না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং এ লক্ষ্যে চাপ সৃষ্টি করতে অপ্রত্যাশিতভাবে অনেক লোক নিয়ে তাঁর অফিসে হাজির হয়েছেন।

তাঁর এ মিথ্যাচারে আমরা স্তম্ভিত। নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর স্বাভাবিক রীতি অনুযায়ীই সুজন নেতৃবৃন্দ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হয়েছিলেন এবং তা পদ্ধতিগতভাবে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করেই। একটি বিতর্কিত নির্বাচনের অকাট্য কিছু প্রমাণ ও তথ্য প্রকাশ করায় সুজন ও ড. বদিউল আলম মজুমদারের ওপর কে এম নূরুল হুদার ক্ষিপ্ত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।’