অনুমোদনের সাড়ে তিন বছর পর দক্ষিণ চট্টগ্রামের তিন উপজেলায় পানি সরবরাহের জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসার নেওয়া ‘ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পের’ প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। তবে দেরিতে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় প্রকল্প ব্যয়ও বেড়েছে। আগে যেখানে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৩৬ কোটি ৩০ লাখ, সেখানে এখন নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৯৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ আগের চেয়ে প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকারও বেশি।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দিনে ৬ কোটি লিটার পানি সরবরাহ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে চট্টগ্রাম ওয়াসার। এই পানির মধ্যে ৭৫ ভাগ সরবরাহ করা হবে শিল্পাঞ্চলের জন্য। বাকি ২৫ ভাগ বরাদ্দ থাকবে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য। বর্তমানে নগরে দিনে ৩২ থেকে ৩৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করতে পারে সংস্থাটি।
অনুমোদনের তিন বছর পর কাজ শুরু
ওয়াসা সূত্র জানায়, ২০১১ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসা এই প্রকল্পটির প্রস্তাব করে। তবে এর পাঁচ বছর পর ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। এরপর গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ‘সিঙ্গেল স্টেজ, টু এনভেলপ’ পদ্ধতিতে উন্মুক্ত দরপত্র গ্রহণ করা হয়। এতে দক্ষিণ কোরিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাইইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের আবেদন গ্রহণ করে সেটি অনুমোদন দেওয়া হয়। ১৫ জুলাই এই কোম্পানির সঙ্গে ওয়াসার চুক্তি সই হয়।
প্রকল্পে কোরীয় সরকারের ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অব কো-অপারেশন ফান্ডের (কেইডিসিএফ) পক্ষে কোরীয় এক্সিম ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সরকার ও চট্টগ্রাম ওয়াসা অর্থায়ন করছে। এর মধ্যে এক্সিম ব্যাংক বরাদ্দ দিচ্ছে ৭০০ কোটি ৮৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে। বাকি টাকা সরকার ও ওয়াসা অনুদান দেবে।
প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ওয়াসার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ প্রকল্পের জন্য পানি শোধনাগার, ১৩৩ কিলোমিটার পাইপলাইন এবং দুটি জলাধারও নির্মাণ করা হবে।
পাশাপাশি টানেলের মাধ্যমে ৪৩৮ মিটার দৈর্ঘ্যের রিভার ক্রসিংসহ নানা কাজও করা হবে।
এর মধ্যে পানি শোধনাগার নির্মাণের জন্য ৪১ দশমিক ২৬ একর জায়গা বোয়ালখালীতে অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া পটিয়া ও আনোয়ারায় নির্মাণ করা হচ্ছে রিজার্ভার। তিন ধাপে হবে এ নির্মাণকাজ। প্রথম ধাপে ভান্ডালজুড়িতে শোধনাগার নির্মাণ, দ্বিতীয় ধাপে কনভয়েন্স, ট্রান্সমিশন ও পাইপলাইন নির্মাণ হবে। শেষ ধাপে পটিয়া ও কেইপিজেডে রিজার্ভার নির্মাণ করা হবে।
পানি যাবে যেখানে
কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে কেইপিজেড, দেশের অন্যতম বৃহৎ সার কারখানা কাফকো, শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বেসরকারি সাদ মুসা শিল্পপার্কসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানা রয়েছে। পাশাপাশি সুপেয় পানির অভাবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কর্ণফুলী আবাসিক এলাকায় দুই দশকেরও বেশি সময়ে বসতি গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এসব শিল্পকারখানা ও আবাসিক এলাকায় পানি সরবরাহ করা যাবে। পাশাপাশি এই প্রকল্পের পানি যাবে নগরের কালুরঘাট শিল্পাঞ্চলেও।
ব্যয় বাড়ার কারণ
২০১৬ সালে একনেকে অনুমোদনের পর প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু শুরু থেকে ভূমি জটিলতায় প্রকল্পের কাজ আটকে যায়। অন্যদিকে প্রকল্প গ্রহণের সময় জায়গার দাম যে হারে নির্ধারণ করে হয়েছিল সেটি এখন কয়েক গুণ বেড়েছে। পাশাপাশি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনার (ডিপিপি) পরিবর্তন করে প্রকল্পের পরিধিও বেড়েছে।
এসব কারণে প্রকল্প ব্যয় বাড়াতে হয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রকল্প পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুব আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নানা জটিলতায় অনুমোদনের তিন বছরেও প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি। তবে এখন সেই জটিলতা কেটে গেছে। প্রকল্পের প্রাথমিক কাজও শুরু হয়ে গেছে। ৩৬ মাসের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। একই কথা বলেন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ।