প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের বিচারাঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র। আজ রোববার সকালে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে সাহাবুদ্দীন আহমদের জানাজা শুরুর আগে প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে সাহাবুদ্দীন আহমদের মরদেহবাহী গাড়িটি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে পৌঁছায়। ১০টা ২০ মিনিটে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সমিতির সম্পাদক মো. রুহুল কুদ্দুস। পরিবারের পক্ষ থেকে সাহাবুদ্দীন আহমদের ছেলে সোহেল আহমদ বক্তব্য দেন।
জানাজার আগে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের স্বর্ণযুগের যে কয়জন বিচারপতি পেয়েছিলাম, তাঁদের মধ্যে সাহাবুদ্দীন আহমদ একজন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই চলে গেছেন। আজ সাহাবুদ্দীন আহমদকে বিদায় জানাচ্ছি।’
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘সাহাবুদ্দীন আহমদ আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন তাঁর দেওয়া রায়ের মাধ্যমে। অষ্টম সংশোধনী মামলা, কখন স্যুট গ্রহণযোগ্য হবে বা হবে না—এই জাতি, সুনির্দিষ্টভাবে বিচারাঙ্গনের সবাই সারা জীবন মনে রাখবে। এখন থেকে ৫০ বছর, ১০০ বছর পরেও বিচারপ্রার্থী জনগণ ওনার রায়ের বেনিফিট (সুফল) পাবেন।’
জানাজার আগে সাহাবুদ্দীন আহমদের ছেলে সোহেল আহমদ বলেন, ‘ব্যক্তিগত জীবনে দেখে মনে হয়েছে উনি মনে-প্রাণে বিচারক ছিলেন।ওনার ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সন্তান, তাঁর অধীন কর্মচারীদের ও সবার সঙ্গে যে ব্যবহার, তাতে মনে হয়েছে, মনে–প্রাণেই উনি একজন বিচারক ছিলেন। সবার সঙ্গে সমান ব্যবহার করতেন উনি।’
সাহাবুদ্দীন আহমদ গতকাল শনিবার সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।
জানাজায় প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি, সাংসদ আসাদুজ্জামান নূর, বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান, রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তা, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন।
জানাজার পরে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে সাহাবুদ্দীন আহমদের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। প্রধান বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, ডাকসু , ছাত্র ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁর মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সকাল ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে সাহাবুদ্দীন আহমদের মরদেহবাহী গাড়ি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ত্যাগ করে।
এদিকে সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ রোববার সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের অবকাশকালীন বেঞ্চের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
সাহাবুদ্দীন আহমদ ১৯৭২ সালের ২১ জানুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হন। একই বছরের ১৮ ডিসেম্বর তাঁর নিয়োগ স্থায়ী হয়। ১৯৮০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হন।
১৯৯০ সালের ১৪ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। দেশের ষষ্ঠ প্রধান বিচারপতি ছিলেন তিনি।
এরশাদ সরকারের পতনের পর সাহাবুদ্দীন আহমদ ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯১ সালের ১০ অক্টোবর পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে আবার বিচারাঙ্গনে ফেরেন। ১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি তিনি অবসরে যান। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাঁকে আবার রাষ্ট্রপতি করা হয়।