সাহস ও মূল্যবোধের অঙ্গীকার অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয়ের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হলো প্রথম আলোর ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। গতকাল শনিবার সকালে কারওয়ান বাজারের সিএ ভবন মিলনায়তনে বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এক আনন্দঘন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
গত ১৯ বছর সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে সততা ও সাহসের সঙ্গে পথ চলেছে প্রথম আলো। তাই ‘সাহস’ হলো এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উৎসবের মূল ভাবনা। সাহসিকতার বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে সারা দেশে, প্রেরণা রয়েছে ইতিহাসে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলনসহ ক্রিকেটে তারুণ্যের বিজয় মিলিয়ে যে অবিস্মরণীয় ঘটনাগুলো সাহস ও সাফল্যের প্রতীক হয়ে আছে, এবারের বর্ষপূর্তিতে প্রথম আলো স্মরণ করছে সেই অনন্য দৃষ্টান্তগুলো।
অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মিডিয়া স্টার লিমিটেডের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান বলেন, গত ১৯ বছরে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক অবস্থা ও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। জনসাধারণের উদ্যোগ, সরকারি-বেসরকারি সংগঠন ও সুশীল সমাজের সম্মিলিত চেষ্টাতেই এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, প্রথম আলো সাহসিকতা ও মূল্যবোধের নীতিতে গভীর বিশ্বাসের সঙ্গে সাংবাদিকতা করছে। তাই আজ এ পর্যায়ে আসতে পেরেছে। কারণ, দিনের শেষে পাঠক ঠিকই বুঝতে পারেন, কোন খবর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং কোন খবর সত্য, স্বাভাবিক। তিনি এ প্রসঙ্গে ফারাজ আইয়াজ হোসেনের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলেন, ‘মাত্র ১৯ বছর বয়সে সে সাহসিকতা ও নৈতিকতার যে দৃষ্টান্ত রেখে গেছে, তা আমাদের সব সময় অনুপ্রাণিত করে। সেই চেতনা নিয়ে প্রথম আলোকে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যেতে হবে। সামনে রয়েছে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।’
সকালে অনুষ্ঠানের শুরুতেই সঞ্চালক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, ‘আমরা সাহসিকতার সঙ্গে আলোর পথে চলতে চাই, দেশটা আলোকিত করতে চাই।’ মঞ্চে আসেন প্রথম আলোর প্রধান আলোকচিত্র সাংবাদিক, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে ফিরে আসা জিয়া ইসলাম। সহকর্মীরা বিপুল করতালিতে তাঁকে অভিনন্দিত করেন। সলিল চৌধুরীর লেখা ও সুর করা উদ্দীপনামূলক গান ‘ও আলোর পথ যাত্রী এ যে রাত্রি, এখানে থেমো না’ গেয়ে শোনান শিল্পী কোনাল।
শিশু ও বাল্যবিবাহ রোধে প্রথম আলো গুরুত্ব দিয়ে সারা বছর ধরে কাজ করেছে। এবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে। দেখানো হলো ‘সাত সাহসী’ নামের প্রামাণ্যচিত্রটি। শিশু ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ময়মনসিংহের নান্দাইলের স্কুলপড়ুয়া সাত বালিকার সাহসী ভূমিকার ওপর রেদোয়ান রনি এটি নির্মাণ করেছেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মিডিয়া স্টার লিমিটেডের পরিচালক সাইফুর রহমান, আতিকুর রহমান, রোকিয়া আফজাল রহমান, আরশাদ ওয়ালিউর রহমান, সিমিন হোসেন ও তাঁর ছেলে যারেফ আয়াত হোসেন, ডেইলি স্টার-এর সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম প্রমুখ।
মাহ্ফুজ আনাম বলেন, সঠিক সাংবাদিকতা একটি জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম আলো সৎ সাংবাদিকতার চর্চার ভেতর দিয়ে গত ১৯ বছরে শ্রেষ্ঠ কাগজে পরিণত হয়েছে।
সব বাধা-প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে এগিয়ে চলায় প্রথম আলোর কর্মীদের অভিনন্দন জানান রোকিয়া আফজাল রহমান।
প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘শুরু থেকেই আমাদের লক্ষ্য ছিল দেশের সেরা কাগজ করা। প্রকাশের সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সেই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু প্রতিনিয়তই নতুন নতুন সমস্যা, প্রতিবন্ধকতা আসছে, আসবে। সবাইকে নিয়েই প্রথম আলো এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সঙ্গে আছে বিপুল পাঠকগোষ্ঠী, তারাই প্রথম আলোর প্রধান শক্তি।’ তিনি বলেন, আগামী বছর ২০ বছর পূর্ণ হবে। এটি সামনে রেখে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে পাঠকের সামনে আসতে যাচ্ছে প্রথম আলো। তিনি পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, শুভানুধ্যায়ী—সবাইকে প্রথম আলোর সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানান।
আলোচনার পর প্রথম আলোর বিভিন্ন বিভাগের কর্মীদের কাজের মূল্যায়ন করে ক্রেস্ট দেওয়া হয়। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান ও পুরস্কারপ্রাপ্ত অন্যরা। এই পর্ব পরিচালনা করেন ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ।
গান দিয়ে শুরু হয়েছিল অনুষ্ঠান, শেষও হলো গানে গানে। বাপ্পা মজুমদার, ইমরান, সাব্বির, কিশোর, দিনাত জাহান, কনা, প্রিয়াঙ্কা গোপ ও অণিমা রায় গেয়ে শোনান ‘সংকটের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান’ ও ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’।