সাহস না থাকলে দাঁড়াতে পারে না অন্য গুণও

সৈয়দ আবুল মকসুদ স্মরণসভায় বক্তব্য দেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

সাংবাদিক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদের যে গুণ সবচেয়ে প্রশংসনীয় ও বিরল ছিল, সেটা হলো তাঁর সাহস। প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনায় তাঁকে এভাবে মূল্যায়ন করেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, সাহস না থাকলে ব্যক্তির অন্য সব গুণ দাঁড়াতে পারে না। সেগুলো ভেঙে পড়ে, নত হয়।

সৈয়দ আবুল মকসুদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বহুমাত্রিক সৈয়দ আবুল মকসুদ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্য দেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। বুধবার  বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করে সৈয়দ আবুল মকসুদ স্মৃতি সংসদ।

আবুল মকসুদ সাহসিকতাকে অন্যের মধ্যে সংক্রমিত করতেন উল্লেখ করে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আজ আমরা যে সমাজে বাস করি, সেখানে ভয় এত প্রবল, আতঙ্ক এত বিস্তৃত যে আমরা স্পষ্ট করে কথা বলতে পারি না, লিখতে পারি না। আমাদের কলম থেমে যায়। সেখানে আবুল মকসুদ সাহস নিয়ে চলেছেন।’

আবুল মকসুদকে আমৃত্যু লড়াকু সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তানদের একজন বলে অভিহিত করেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, আবুল মকসুদ কখনো বাক্‌স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ মেনে নিতে পারেননি। নির্বাচন কমিশনসহ সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান একে একে ধ্বংসের দিকে যাবে, এটা তিনি মেনে নিতে পারেননি।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বহুদূরে সরে যাওয়াও তিনি মেনে নিতে পারেননি। মানুষের বাক্‌স্বাধীনতা হরণ ও তাঁকে নির্যাতনের দিকে ঠেলে দেওয়ার যে ব্যবস্থা চালু হয়েছে, তার বিরুদ্ধে প্রচণ্ডভাবে তিনি ক্ষুব্ধ ছিলেন। এ জন্য আবুল মকসুদ সংগ্রাম করে গেছেন লেখা, কাজ, পোশাকের মধ্য দিয়ে।

প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালে ইরাকে ইঙ্গ-মার্কিন আগ্রাসনের প্রতিবাদে ঘোষণা দিয়ে পশ্চিমা পোশাক বর্জন করেন সৈয়দ আবুল মকসুদ। সেলাইবিহীন দুই প্রস্ত থান কাপড় শরীরে জড়িয়ে রাখতেন তিনি। আমৃত্যু এ পোশাকেই ছিলেন।

অনেকে আদর্শের কথা বললেও কাজের ক্ষেত্রে তা দেখা যায় না। কিন্তু সৈয়দ আবুল মকসুদ যা বলতেন, তার চর্চাও করতেন বলে উল্লেখ করেন শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘তাঁর চারিত্রিক অখণ্ডতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জন্য। চারিত্রিক অখণ্ডতা সেই গুণ, যার কারণে একজন মানুষ তাঁর শিরদাঁড়া শক্ত করে দাঁড়াতে পারেন। যেকোনো প্রতিবাদে অংশ নিতে পারেন, যেকোনো শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারেন। আবুল মকসুদকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে পড়তে হবে। শুধু পড়লেই হবে না, তাঁর মতো চারিত্রিক অখণ্ডতা বজায় রাখতে হবে।’

লেখক, গবেষক মফিদুল হক বলেন, সমাজের যত বড় রকমের সংকট, প্রায় সবখানেই সৈয়দ আবুল মকসুদকে দেখা গেছে। তিনি সামনের কাতারে থাকা মানুষ ছিলেন। বহু মানুষকে নিয়ে চলার চেষ্টা করেছেন তিনি।

আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন সৈয়দ আবুল মকসুদের ছেলে সৈয়দ নাসিফ মকসুদ। তিনি বলেন, ‘এক বছর হলো আব্বা চলে গেছেন। এ দিনটি আমাদের কাছে অত্যন্ত কষ্টের। আব্বার পরিবারের সদস্য কেবল আমরা ছিলাম না, অনেক কৃষক–শ্রমিকও তাঁর পরিবারের সদস্য ছিলেন।’

আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানে আরও কথা বলেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, শরিফুল হাসান, আলমগীর কবির ও ইমরান মাহফুজ।