প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের সবার নাম প্রকাশ করার প্রস্তাব করেছেন বিশিষ্ট নাগরিকেরা এবং যাঁদের নাম নির্বাচন কমিশনার হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করা হবে, তাঁদেরও নামও গণমাধ্যমে প্রকাশ করার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। সার্চ কমিটির পক্ষ থেকে নাম প্রকাশের বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য যোগ্য ব্যক্তি বাছাইয়ের আজ শনিবার বিশিষ্টজনদের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করেছে অনুসন্ধান কমিটি। সুপ্রিম কোর্টের কনফারেন্স কক্ষে এ বৈঠক হয়।
আগামীকাল রোববার বিশিষ্টজন ও পেশাজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করবে অনুসন্ধান কমিটি। ইতিমধ্যে ৬০ জনের বেশি বিশিষ্ট নাগরিক ও পেশাজীবীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। শনিবার প্রথমার্ধে প্রথম দফার এই বৈঠক বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলে। এরপর দ্বিতীয় দফা বৈঠক শুরু হয়। বৈঠক শেষে কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীর সঙ্গে কথা বলেন।
বৈঠক শেষে একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক বাবু বলেন, ভিন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শতভাগ ঐকমত্য তৈরি করা মুশকিল। দেশের একটি বড় রাজনৈতিক অংশ এই প্রক্রিয়ার বাইরে। তাই এই সার্চ কমিটির ওপর বাড়তি দায়িত্ব। মানুষের জন্য গ্রহণযোগ্য তালিকা প্রকাশ করতে হবে। নাম প্রকাশের ক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের নাম কয়েক দিন আগে গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে।
ভোরের কাগজ-এর সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, যাঁদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে, তাঁদের নাম প্রকাশ করতে হবে। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু এবং নারীরা নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার শিকার বেশি হন। ফলে কমিশনে তাঁদের প্রতিনিধিত্ব যাতে থাকে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, যত নাম এসেছে সেগুলো প্রকাশ করেন, যাতে জনগণ দেখতে পারে। আপনারাও দেখেশুনে প্রস্তাব করতে পারেন। তিনি বৈঠকে বেশ কয়েকজনের নাম প্রস্তাব করেছেন বলে জানান। তিনি বলেন, বিএনপিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল আসেনি। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের আনার চেষ্টা করে দেখেন। বিএনপি সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন করছে সেটি ভিন্ন বিষয়, তারা নির্বাচন কমিশন বিষয়ে নাম প্রস্তাব করতে পারে।
সমকালের প্রকাশক এ কে আজাদ বলেন, যাঁদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে কখনোই প্রশ্ন ছিল না, যাঁরা যোগ্য ব্যক্তি, তাঁদের নাম যেন প্রস্তাব করা হয়। যাঁদের নাম এসেছে তাঁদের সবার নাম প্রকাশ করা হোক। যাঁদের নাম প্রস্তাব করা হবে তাঁদের নামও যেন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। সার্চ কমিটির পক্ষ থেকে নাম প্রকাশের বিষয়ে বিশিষ্ট নাগরিকদের আশ্বস্ত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, জনগণের বিশ্বাসের জায়গায় আছেন এমন ব্যক্তিদের নাম যেন প্রস্তাব করা হয়। নির্লোভ, সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন এমন ব্যক্তিদের নাম যেন প্রস্তাব করা হয়।
প্রথম দফা বৈঠক সরকার ও রাজনৈতিক দলের সুবিধাভোগীদের নাম না দেওয়ার প্রস্তাব করেন বিশিষ্ট নাগরিকেরা। ইসি নিয়োগে প্রস্তাবিত নামগুলো আগেই প্রকাশের দাবি তুলেছেন তাঁরা। পাশাপাশি ইসি নিয়োগে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পরিপন্থী ব্যক্তিদের নাম যাতে প্রস্তাব না করা হয় এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ পরিপন্থী কেউ যাতে ইসিতে আসতে না পারেন, সে বিষয়টি নিশ্চিতের প্রস্তাব করেছেন তাঁরা। প্রথম দফায় অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বিশিষ্ট নাগরিকেরা তাঁদের এমন মতামত ও প্রস্তাবের কথা সাংবাদিকদের জানান।