বগুড়ায় বাঙ্গালী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সারিয়াকান্দিতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) বিকল্প ফেরিসেতুর এক পাশের সংযোগ পথ ডুবে গেছে। এতে মঙ্গলবার থেকে জেলা সদরের সঙ্গে সারিয়াকান্দির সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ধুনটের বথুয়াবাড়ী ঘাটে পারাপারের বিকল্প ফেরিসেতুর পন্টুন ডুবে গিয়ে জেলা শহরের সঙ্গে ধুনট উপজেলার সাতটি সড়কের যানবাহন চলাচল চার দিন বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ।সওজ বগুড়া সূত্র জানায়, বগুড়া-সারিয়াকান্দি সড়কের বাঙ্গালী নদীর ওপর নির্মিত বেইলি সেতু ভেঙে আরসিসি গার্ডার সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। নদী পারাপারের জন্য বিকল্প সংযোগ রাস্তার বরাদ্দ না থাকায় সওজ সেতুর পাশে দুটি ফেরিসেতু স্থাপন করে দুই পাশে বেইলি সংযোগ পথ তৈরি করে দেয়। কিন্তু নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফেরি সেতুর পূর্বপ্রান্তের সংযোগ পথ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সঙ্গে জেলা সদরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বগুড়া সওজ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হামিদুল হক জানান, ফেরি চলাচলের জন্য মন্ত্রণালয়ের আলাদা অনুমতি লাগবে। গত নভেম্বর মাসে ফেরি চলাচলের অনুমতি চেয়ে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনো অনুমতি মেলেনি।ফেরি সেতুর নিরাপত্তাকর্মী সুলতান মাহমুুদ জানান, ফেরি সেতু দিয়ে প্রতিদিন ৪০-৫০ হাজার মানুষ নদী পারাপার হতো। ফুলবাড়ির কাঁচামাল ব্যবসায়ী আবদুর রহিম (৪৫) বলেন, নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতে জনপ্রতি চার টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে। মালামালের ভাড়া আলাদা। বারইপাড়ার ফল ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলাম (৬৫) বলেন, ‘বগুড়া থ্যাকি দুভাঁড় আম লিয়ে আচ্চি। সারিয়াকান্দি হাটত য্যাতে চাচ্চি। ৬০ টেকা মালের নৌকা ভাড়া চায়। ওই টেকা তো লাভই হবি না।’খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে মাঝিদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছেন আওয়ামী লীগের কর্মী শহীদুল, ছকো, হেলাল উদ্দিন ও মিজু। সারিয়াকান্দি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুমন চাঁদাবাজির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে কিছু যুবক মাঝিদের কাছ থেকে চাঁদা তুলছে এমন অভিযোগ পেয়ে পুলিশ অস্থায়ী ঘাট এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। সওজ বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না থাকলেও বিকল্প পারাপারের জন্য ফেরি চলাচলের উদ্যোগের বিষয়টি সওজের বিবেচনায় আছে। কিন্তু ফেরি চলাচলের মতো নদীতে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় সে উদ্যোগও সফল হচ্ছে না। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম সরদার বলেন, বাঙ্গালী নদীতে পানিপ্রবাহ বর্তমানে ১৪ দশমিক ৬৫ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার একেবারে কাছাকাছি।স্থানীয় সাংসদ আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, দলের নাম ভাঙিয়ে মাঝিদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির ঘটনা সত্য। শহীদুলসহ তাঁর সহযোগীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এলাকাবাসীর দুর্ভোগ বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত সেখানে ফেরি পারাপারের ব্যবস্থা করার জন্য সওজকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।ধুনটের বথুয়াবাড়ীতে বাঙ্গালী নদীর ওপর ভেঙে পড়া বেইলি সেতুর জায়গায় গার্ডার সেতুর কাজ চলছে। এ কারণে সওজ জেলা শহরের সঙ্গে ধুনট উপজেলার সাতটি সড়কের যাত্রীদের চলাচলের জন্য বথুয়াবাড়ীতে নদীর ঘাটে দুটি ফেরির দুই পাশে পন্টুন দিয়ে বিকল্প সেতু নির্মাণ করে। কিন্তু গত কয়েক দিনে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে ফেরিসেতুর দুই পাশে পন্টুন পানিতে ডুবে গেছে। এ কারণে পন্টুন থেকে দুটি ফেরি সরে যাওয়ায় যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। মানুষ ছোট ছোট নৌকায় চড়ে ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হচ্ছে। বগুড়া সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হামিদুল হক বলেন, দুই-এক দিনের মধ্যে ফেরি চালাচলের ব্যবস্থা করা হবে।