ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর ঘিরে সহিংসতার জন্য সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় একদল লেখক-অধ্যাপক, সাংবাদিক-সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মী।
সোমবার এক বিবৃতিতে এই দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
বিবৃতিদাতারা হলেন- সাংবাদিক ও কলাম লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরী, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, সমাজবিজ্ঞানী অনুপম সেন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি সারওয়ার আলী, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, সাংবাদিক আবেদ খান, লেখক-অধ্যাপক আবদুস সেলিম, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি, লেখক ও প্রকাশক মফিদুল হক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির শাহরিয়ার কবীর ও লেখক-অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।
বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে একাত্তরের বন্ধুদেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রতীকী সফরকে কেন্দ্র করে যেভাবে দেশের সম্পদ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে তা মুক্তিযুদ্ধের পথ থেকে দেশকে আবার পাকিস্তানি পথে নেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র মেলে ধরেছে। হেফাজতি ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে আপস করে যে তাদের উগ্র ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড উসকে দেওয়া হয়েছে সেটা আজ পরিষ্কার। আমরা এই সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সরকারের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ দেখতে চাই। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের ঘোষিত যুদ্ধের মোকাবিলায় সরকারের সর্বশক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে এদের নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানাই।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২৬ মার্চ মুজিব শতবর্ষে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে হেফাজতে ইসলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হাটহাজারীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালিয়েছে, তা কেবল ১৯৭১ সালের পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদরদের ঘৃণ্য ও নৃশংস কর্মকাণ্ডের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত হয়ে অথবা ভারচ্যুয়ালি উপস্থিত থেকে সারা বিশ্বের রাষ্ট্রনায়কেরা যখন বাংলাদেশের সার্বিক অগ্রগতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুসরণীয় নেতৃত্বের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তখন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চক্র আমাদের অর্জিত গৌরবকে ধূলিসাৎ করার নীলনকশা বাস্তবায়নে তৎপর। হেফাজত ও অন্যান্য স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ২৬ মার্চ হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি অফিস, স্থাপনা, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে এবং রাস্তাঘাট ও রেললাইনের ক্ষতিসাধন করে ত্রাসের সৃষ্টি করে। এমনকি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও প্রতিকৃতি ধ্বংস করার ধৃষ্টতা দেখায়।
এতে বলা হয়, মূলত ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে হেফাজত এই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটায়। আমরা পরিষ্কার বলতে চাই যে, ভারত ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান বন্ধু ও সহায়তাকারী দেশ। ভারতের সরকার ও জনগণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সার্বিক সহযোগিতা, এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয়, খাদ্য ও চিকিৎসা দিয়ে মানবতার যে ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা কৃতজ্ঞতার সাথে আমরা স্মরণ করি।
সাম্প্রদায়িক অপশক্তিগুলো মসজিদ ও মাদ্রাসাকে ব্যবহার করে স্বাধীনতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিবিরোধী তৎপরতা যেন চালাতে না পারে সে জন্য বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিবৃতিদাতারা।
তাঁরা বলেছেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। তাই ইসলামের পবিত্র স্থাপনাসমূহকে ব্যবহার করে গণবিরোধী এ তৎপরতা সমাজ ও রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করবে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।