সাভারের জাতীয় বস্ত্র প্রকৌশল ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (নিটার) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অব্যাহত আন্দোলনের মুখে গত সোমবার পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নিটার বন্ধ ঘোষণার পাশাপাশি আজ মঙ্গলবার সকাল নয়টার মধ্যে ছাত্র ও ছাত্রীনিবাস খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীরা নিবাস না ছেড়ে সাত দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। আজ সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আন্দোলন চলছিল।
নিটার কর্তৃপক্ষ বলছেন, অযৌক্তিক দাবিতে কতিপয় শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলাবহির্ভূত কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা প্রশাসনিক ভবন ও শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে দাবি আদায়ের চেষ্টা করছিলেন।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা বলছেন, কর্তৃপক্ষ তাঁদের যৌক্তিক দাবি মেনে না নিয়ে নানাভাবে হয়রানি করছেন। ক্যাম্পাসে পুলিশ পাঠিয়ে ও মুঠোফোনে শিক্ষার্থী এবং তাঁদের অভিভাবকদের নানা ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।
সপ্তম ও অষ্টম ব্যাচের এক বিষয়ে অকৃতকার্য চার ছাত্রের ফল বাতিল করে সংশোধিত ফল ঘোষণাসহ আরও ছয় দফার দাবিতে গত ১১ এপ্রিল থেকে প্রতিষ্ঠানের চার ব্যাচের ১ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী টানা ২০ দিন ধরে ক্লাস বর্জন করে চলেছেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে নিটার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হতে থাকে।
নিটার পক্ষ থেকে জানানো হয়, অব্যাহত আন্দোলনের কারণে গত সোমবার নিটার পরিচালনা পর্ষদের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এক বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাম্পাসে কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী কর্তৃক সংঘটিত শৃঙ্খলাবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের কারণ দেখিয়ে মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণার পাশাপাশি সকাল নয়টার মধ্যে ছাত্র ও ছাত্রীনিবাস খালি করার নির্দেশ দেন।
এ ঘোষণয় আজ সকালে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। তাঁরা ‘ক্যাম্পাস বাঁচাও’ নামে আন্দোলনের ডাক দিয়ে দফায় দফায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করে অনতিবিলম্বে তাঁদের দাবি মেনে নিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম চালু করার দাবি জানান।
শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষার্থীদের ভয় দেখানোর জন্য গত সোমবার রাত থেকে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যদিও পুলিশ তাঁদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কোনো বাধা দেয়নি। নিবাস ত্যাগ করাতে শিক্ষকেরা শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের ফোন করে মামলার ভয় দেখানো হচ্ছে। বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে ছাত্র ও ছাত্রীনিবাসের পানি আর বিদ্যুতের লাইন।
তাঁরা বলেন, কোনো হুমকি-ধমকি শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে দমাতে পারবে না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থীও ঘরে ফিরবেন না।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রিফাত জাহীন বলেন, ‘গতকাল সকালে নিটারের রেজিস্ট্রার কাজী আন্দালিব আমিন আমার বাবার মুঠোফোনে কল করে আমাকে ক্যাম্পাস থেকে বাসায় ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। একপর্যায়ে বাবার মুঠোফোনে তিনি আমাকে তাঁদের কথামতো বাসায় না ফিরলে আমার ও আব্বার বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেন। একইভাবে অনেক শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের হুমকি দিয়েছেন তিনি।’
জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার কাজী আন্দালিব আমিন বলেন, নিটার পরিচালিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। তাই কোনো শিক্ষার্থীর ফল বাতিল করে সংশোধিত ফল ঘোষণার ক্ষমতা নিটারের হাতে নেই। বিষয়টি বারবার বোঝানোর পরও শিক্ষার্থীরা অযৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনের নামে শৃঙ্খলাবহির্ভূত কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ থেকে নিটার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার পাশাপাশি ছাত্র ও ছাত্রীনিবাস খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
কোনো শিক্ষার্থীর শৃঙ্খলাবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের কারণে ওই শিক্ষার্থী ও তাঁর বাবা অথবা অভিভাবকদের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি কতটা সংগত—এমন প্রশ্নের জবাবে রেজিস্ট্রার কাজী আন্দালিব আমিন বলেন, পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থী ও তাঁর অভিভাবকদের এসব বলা হয়েছে।