বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার এম খায়রুজ্জামানকে ছেড়ে দিয়েছে মালয়েশিয়ার অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। আজ বুধবার মালয়েশিয়ার গণমাধ্যম ফ্রি মালয়েশিয়া টুডের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
খায়রুজ্জামানের স্ত্রী রিটা রহমান ফ্রি মালয়েশিয়া টুডেকে বলেন, তাঁর স্বামী তাঁকে ফোন দিয়ে মুক্তি পাওয়ার খবর দিয়েছেন। খায়রুজ্জামান তাঁকে বলেছেন, মুক্তির পর তাঁকে গ্রহণের জন্য ঘটনাস্থলে আইনজীবী রয়েছেন। তিনি বাসায় ফিরতে যাচ্ছেন।
খায়রুজ্জামানের এক আইনজীবী বলেন, তাঁর মক্কেলকে মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি। তিনি এখন একজন মুক্ত ব্যক্তি।
মুক্তির পর খায়রুজ্জামান বলেছেন, ‘এখন আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে আমার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাই।’
খায়রুজ্জামানকে ১০ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গর প্রদেশের আমপাং এলাকার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে দেশটির অভিবাসন পুলিশ।
খায়রুজ্জামানকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার মালয়েশিয়ার হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দেন। মালয়েশিয়ার হাইকোর্টের বিচারপতি মোহাম্মদ জাইনি মাজলান গতকাল খায়রুজ্জামানের রিট আবেদনের শুনানির সময় এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে হাইকোর্টে খায়রুজ্জামানের পক্ষে করা আবেদনের শুনানির জন্য আগামী ২০ মে তারিখ ধার্য করেন। এর আগে গত শুক্রবার খায়রুজ্জামানকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের ক্ষেত্রে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের একটি আদালত।
গ্রেপ্তারের পর খায়রুজ্জামানের আইনজীবীরা দাবি করেন, তাঁদের মক্কেল (খায়রুজ্জামান) একজন রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী। তিনি জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) কার্ডধারী। তিনি কোনো অভিবাসন আইন লঙ্ঘন করেননি। তাঁর বৈধ ভ্রমণ নথিপত্র আছে। তিনি মালয়েশিয়ায় কোনো কাজ করছিলেন না। তিনি বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। তাই তাঁকে আটক বা গ্রেপ্তার করা বেআইনি। তাঁকে বহিষ্কার করার অধিকার মালয়েশিয়ার নেই।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা থেকে পরে সামরিক সরকারের আমলে প্রেষণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ পেয়ে কূটনীতিক হন খায়রুজ্জামান।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জেলে জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি খায়রুজ্জামানকে চাকরিচ্যুতির পর গ্রেপ্তার করা হয়।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে খায়রুজ্জামান জামিনে মুক্তি পান। এরপর চাকরি ফিরে পেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মহাপরিচালক পদে যোগ দেন তিনি।
২০০৪ সালে জেলহত্যা মামলা থেকে খালাস পান খায়রুজ্জামান। ২০০৫ সালে তিনি মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাসে নিয়োগ পান। পরে ২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে মালয়েশিয়ায় তৎকালীন বাংলাদেশি হাইকমিশনার খায়রুজ্জামানকে দেশে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই আদেশ অগ্রাহ্য করে তিনি মালয়েশিয়ায় থেকে যান।
প্যারিসভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটসের তথ্য অনুযায়ী, খায়রুজ্জামান জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার নিবন্ধিত শরণার্থী।