স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে। তৎকালীন স্বাস্থ্যসচিব আসাদুল ইসলাম এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালককে (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) মৌখিক নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর মন্ত্রীর উপস্থিতিতে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ গতকাল বুধবার স্বাস্থ্যসচিব আবদুল মান্নানের কাছে লিখিত ব্যাখ্যা জমা দেন। তিনি কীভাবে বা কোন প্রক্রিয়ায় বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন, ব্যাখ্যায় তা স্পষ্ট করেন।
রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তির আগে কী কী বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল, তা উল্লেখ করে ব্যাখ্যায় বলা হয়, অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ের ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’ বলতে সাবেক স্বাস্থ্যসচিবকে বোঝানো হয়েছে। অধিদপ্তরের পরিচালকের (হাসপাতাল) লেখা ও স্বাক্ষর করা প্রতিবেদন এবং অধিদপ্তরের নথিতে (ফাইল নোট) সাবেক স্বাস্থ্যসচিবের নির্দেশের কথা উল্লেখ রয়েছে। ব্যাখ্যায় দাবি করা হয়, তাঁরা রিজেন্ট হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন এবং হাসপাতালটিকে উপযোগী পেয়েছেন।
এদিকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম মৌখিক নির্দেশ দিয়েছিলেন কি না, তা অবশ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গত ৪ জুন তাঁকে পরিকল্পনা বিভাগে বদলি করা হয়। চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, তাঁরাও এ বিষয়ে সাবেক সচিবের ব্যাখ্যা জানার অপেক্ষায় আছেন।
তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, সাবেক স্বাস্থ্যসচিবের মৌখিক নির্দেশে এ চুক্তি করা হয়েছে। সচিব মৌখিক নির্দেশ দিতেই পারেন। কিন্তু তিনি যদি এখন তা অস্বীকার করেন, তাহলে বিষয়টি প্রমাণ করা যাবে না। বাস্তবে মৌখিক নির্দেশের কোনো ‘গ্যারান্টি’ নেই।
তাহলে করোনা চিকিৎসার মতো স্পর্শকাতর দায়িত্ব বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার দায় কার, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আগে দেখি, সচিব রিঅ্যাক্ট করেন কি না।’ তখন চুক্তির বিষয়ে সচিব কি আপনাকে জানিয়েছিলেন? জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমার খেয়াল নেই। তবে সচিব এটা নিজেই পারেন। আর চুক্তি করা কোনো অন্যায় নয়।’
অধিদপ্তরের ব্যাখ্যা পরীক্ষা করে দেখছেন জানিয়ে বর্তমান স্বাস্থ্যসচিব আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যতটুকু জেনেছি, সাবেক স্বাস্থ্যসচিব আর অধিদপ্তরের পরিচালক মিলেই কাজটি করেছেন। বিষয়টি পর্যালোচনা করে তারপর সব বলব। তাঁদের ব্যাখায় সন্তুষ্ট হলেও আমরা লিখিতভাবে জানাব। আর সন্তুষ্ট না হলে ব্যবস্থা নেব।’
অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) আমিনুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, সরকার রিজেন্ট হাসপাতালের দুটি শাখাকে (উত্তরা ও মিরপুর) কোভিড চিকিৎসার মতো স্পর্শকাতর দায়িত্ব দিয়ে ওই সমঝোতা স্মারকে সই করে। অথচ হাসপাতালটির এ বিষয়ে তেমন সক্ষমতা নেই। নেই হাসপাতাল পরিচালনার অনুমতি (লাইসেন্স)। নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা না করেই দেওয়া হতো সনদ।
রিজেন্ট হাসপাতালের এসব অপকর্ম প্রকাশ হওয়ার পর সমালোচনার মুখে গত শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ বিষয়ে একটি ব্যাখ্যা দেয়। এতে বলা হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই ব্যাখ্যায় ক্ষুব্ধ হয় মন্ত্রণালয়। এরপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। অধিদপ্তর গতকাল সেই ব্যাখা জমা দিয়েছে।
র্যাব ৬ জুলাই অভিযান চালিয়ে সিলগালা করে দেয় রিজেন্ট হাসপাতাল। হাসপাতালের চেয়ারম্যানসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এক কিশোরসহ ৯ বেতনভুক্ত কর্মচারীকে গ্রেপ্তারের পর মূল হোতা সাহেদও গতকাল ধরা পড়েছেন।