টিআইবির বিবৃতি

সাবেক সাংসদকে কারাগারে পাঠানোর পরেই বিচারক বদলি ভয়াবহ দৃষ্টান্ত

সাবেক সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল ও তাঁর স্ত্রী লায়লা পারভীন। ছবি: সংগৃহীত
সাবেক সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল ও তাঁর স্ত্রী লায়লা পারভীন। ছবি: সংগৃহীত

দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় সাবেক সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল ও তাঁর স্ত্রীর জামিন নামঞ্জুরের প্রেক্ষিতে বিচারকের বদলি ও পরে ভারপ্রাপ্ত জজের জামিন মঞ্জুরের ঘটনা অধস্তন আদালতে ভয়াবহ দৃষ্টান্ত বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

আজ বুধবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে টিআইবি এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানায়। একই সঙ্গে এ ঘটনার প্রেক্ষিতে দেশে আইনের শাসন ও ন্যায় বিচারের সম্ভাবনা বিকাশের স্বার্থে বিচার বিভাগকে কার্যকরভাবে নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বিবৃতিতে বলেন, ‘দুদকের মামলায় জেলা ও দায়রা জজ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং তাঁর স্ত্রীর জামিন নামঞ্জুরকে কেন্দ্র করে, তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট বিচারককে ওএসডি ও বদলি করে মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা এবং কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ভারপ্রাপ্ত জজ কর্তৃক জামিন মঞ্জুরের ঘটনা অভূতপূর্ব। যা দেশে আইনের শাসন, ন্যায় বিচার ও জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ করার এক ভয়াবহ দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ঘটনা আদালতের ওপর নির্বাহী বিভাগ ও রাজনৈতিক প্রভাবের ব্যাপক বিস্তার, প্রভাবশালীদের হাতে আইনের শাসনের জিম্মি হওয়া ও বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে ক্রমাগত বিকাশে তৎপর স্বার্থান্বেষী মহলকে আরও ক্ষমতায়িত করবে। আমরা সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি এ ধরনের আত্মঘাতী পথ পরিহার করে বিচার বিভাগকে বাস্তবেই স্বাধীন করার উপযোগী কার্যকর পথ অনুসরণের জন্য আহ্বান জানাই।

পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজ মো. আব্দুল মান্নানকে বদলি করে আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। আর যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ নাহিদ নাসরিনকে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মঙ্গলবার বিকেলে আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (প্রশাসন ১) শেখ গোলাম মাহাবুব স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়।

মঙ্গলবার সকালে পিরোজপুরের সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল তিনটি মামলায় এবং তাঁর স্ত্রী লায়লা পারভীন একটি মামলায় পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। দুপুরে শুনানি শেষে বিচারক মো. আবদুল মান্নান জামিন নামঞ্জুর করে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। কারাগারে পাঠানো আদেশের পর আউয়াল ও লায়লা পারভীনের আইনজীবী আদালতে তাঁদের অসুস্থতার চিকিৎসা প্রতিবেদনসহ হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা ও ডিভিশন দেওয়ার আবেদন করেন। বেলা পৌনে তিনটার দিকে বিচারক ডিভিশনসহ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। এর কিছুক্ষণ পর জেলা ও দায়রা জজ মো. আবদুল মান্নানকে বদলির চিঠি পাঠানো হয়। এরপর তিনি যুগ্ম ও জেলা জজ নাহিদ নাসরিনের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। বিকেল পৌনে চারটার দিকে আউয়াল ও লায়লা পারভীনের আইনজীবীরা ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ নাহিদ নাসরিনের কাছে পুনরায় জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিকেল চারটার দিকে বিচারক আসামিদের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন।

গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের বরিশাল সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আলী আকবর বাদী হয়ে আউয়ালের বিরুদ্ধে খাসজমিতে ভবন নির্মাণ, অর্পিত সম্পত্তি ও পুকুর দখলের অভিযোগে তিনটি মামলা করেন। একটি মামলায় আউয়ালের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী পিরোজপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী লায়লা পারভীনকেও আসামি করা হয়েছে। গত ৭ জানুয়ারি আউয়াল ও লায়লা পারভীন হাইকোর্ট থেকে আট সপ্তাহের অন্তর্বর্তী জামিন নেন। মঙ্গলবার ওই জামিনের মেয়াদ শেষ হলে তাঁরা পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন।

এর আগে দুপুরে আউয়ালকে কারাগারে পাঠানোর আদেশের পর পিরোজপুর হুলারহাট সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটে। শহরের সার্কিট হাউস এলাকায় সড়কে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করা হয়। পরে পিরোজপুর-পাড়েরহাট সড়কের কয়েকটি স্থানে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করা হয়। এ ছাড়া শহরের গোপাল কৃষ্ণ টাউন ক্লাব সড়কে প্রতিবাদ মিছিল করে আউয়ালের অনুসারীরা।

পিরোজপুর-১ আসনে ২০০৮ সালে আউয়াল প্রথম সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হন। বর্তমানে এ আসনের সাংসদ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।