আওয়ামী লীগের বহুল বিতর্কিত নেতা ও সাবেক সাংসদ শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক কৃতী খেলোয়াড় সম্রাট হোসেন এমিলিকে অস্ত্র ঠেকিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।
নারায়ণগঞ্জ ক্লাব লিমিটেডের অভ্যর্থনা কক্ষে গতকাল শুক্রবার সকালে এই মারধরের ঘটনা ঘটে বলে এমিলি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন।
এদিকে সাংবাদিকদের কাছে ওই অভিযোগ করার পর দুটি টেলিভিশন চ্যানেলে এ-সংক্রান্ত খবর প্রচারিত হয়। এর পরপরই পুলিশ এমিলিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তবে ঘণ্টা খানেক পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এমিলি নারায়ণগঞ্জ যুবলীগের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক।
এমিলি অভিযোগ করেন, গতকাল সকাল আটটার দিকে শহরের খানপুরের বাসা থেকে দ্বিগুবাবুর বাজারের উদ্দেশে বাড়ি থেকে তিনি বের হন। পথে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে প্রাইভেট কার পার্ক করে ক্লাবের সভাপতি মো. সোলায়মান কখন ক্লাবে আসবেন, তা নিরাপত্তা প্রহরীদের কাছে জানতে চান। এ সময় শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আসিফ হাসান মাহমুদ ওরফে মানু ও অপর একজন অস্ত্র ঠেকিয়ে তাঁকে টেনেহিঁচড়ে ক্লাবের অভ্যর্থনা কক্ষে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর সেখানে পিস্তল হাতে শামীম ওসমান আসেন। শুরু করেন অকথ্য ভাষায় গালাগালি। একপর্যায়ে তাঁকে লাথি মারেন ও মুখে পিস্তলের নল ঢুকিয়ে দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেন।
শামীম ওসমান কেন মারধর করলেন, এমন প্রশ্নের কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ এমিলি জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানান। এমিলি জানান, মারধরের খবরে তাঁর বাক্প্রতিবন্ধী অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এখন তাঁর পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।
নিজেকে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী দাবি করে এমিলি বলেন, ‘আল্লাহর দরবারে এর বিচার দিয়ে রাখলাম। প্রশাসনের কাছে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে কেউ সুবিচার পায়নি।’
এদিকে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করার পর খানপুর হাসপাতাল জামে মসজিদ থেকে জুমার নামাজ পড়ে বাসায় ফেরার পথে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার পুলিশ তাঁকে আটক করে। একই সময় নারায়ণগঞ্জে ওই দুটি টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুর কাদের বলেন, ‘আমাদের কাছে খবর ছিল, এমিলি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় শহরে কয়েকটি রিকশা ভাঙচুর করেছেন। কিন্তু তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি। তাই পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সভাপতি এম সোলায়মান জানান, শুক্রবার হওয়ায় তিনি সকালে ক্লাবে যাননি। এ ধরনের কোনো ঘটনার খবরও তাঁর জানা নেই।
অন্যদিকে অভিযোগ পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়ে শামীম ওসমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এমিলির সঙ্গে আমার দেখাই হয়নি। তা ছাড়া সে মাদকাসক্ত। তাকে মারধরের কোনো প্রশ্নই আসে না।’
শামীম ওসমান ধনীদের বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের রেস্টহাউসের একটি কক্ষে গত বৃহস্পতিবার রাত কাটান। ওই রাতে তাঁর নিরাপত্তায় কয়েকজন সশস্ত্র ক্যাডারও সেখানে অবস্থান করে।
এমিলির ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, এমিলি এ বছর খানপুর বরফকল গরুর হাটের নিয়ন্ত্রণে ছিলেন। প্রতিবছর এই হাট থেকে শামীম ওসমানকে মোটা অঙ্কের চাঁদা ও কয়েকটি গরু উপহার দেওয়া হয়। শামীম ওসমানের পক্ষে তাঁর একজন শ্যালক এ উপহার গ্রহণ করেন। চলতি বছর এমিলি চাঁদা ও গরু দেননি। এতে ক্ষুব্ধ হন শামীম ওসমান।
এর আগে শামীম ওসমান ২০১১ সালের ১৮ জুন জেলা প্রশাসকের সমেঞ্চলন কক্ষে এক সভায় সাংসদ সারাহ্ বেগম কবরীকে লাঞ্ছিত ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে পিটিয়েছিলেন।