সাফল্যে হাসিমুখ দুশ্চিন্তায় মলিন

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার কাটগর গ্রামে সজীব রায় তাঁর মা, বাবা ও বোনের সঙ্গে। গত রোববার বাড়ির সামনে। ছবি: প্রথম আলো
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার কাটগর গ্রামে সজীব রায় তাঁর মা, বাবা ও বোনের সঙ্গে। গত রোববার বাড়ির সামনে।  ছবি: প্রথম আলো

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সজীব রায় এবার ভর্তি পরীক্ষায় তৃতীয় হয়েছেন। কিন্তু টাকার অভাবে এখন ভর্তি হওয়া নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। ভাঙাচোরা ঘর। নিয়মিত দুবেলা খাবারও জোটেনি। এমনই এক চরম দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারের সন্তান এবার মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। শুধু সুযোগই নয়, তিনি ওই ভর্তি পরীক্ষায় তৃতীয় হয়েছেন। কিন্তু দারিদ্র্য তাঁর মেডিকেলে পড়াশোনায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জীবনে এত বড় সাফল্যের মধ্যেও তাঁর মনে এখন হতাশা বিরাজ করছে। এ নিয়ে চিন্তিত তাঁর মা-বাবাও।

এই অদম্য কৃতী শিক্ষার্থীর নাম সজীব রায়। বাড়ি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার কাটগর গ্রামে। বাবা মনধর রায় গাছকাটা শ্রমিক। মা চারুবালাও শ্রমিকের কাজ করেন। ছোট বোন বৃষ্টি রায় স্থানীয় বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ছোটবেলা থেকেই চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন সজীব। অভাব কখনোই পিছু না ছাড়লেও তাঁর স্বপ্ন পূরণে তা বাধা হতে পারেনি। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় উপজেলার মধ্যে প্রথম হয়ে স্বপ্ন পূরণে এক ধাপ এগিয়ে যান তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় পেরোতে থাকেন একের পর এক পরীক্ষার সিঁড়ি। সব শেষে মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় তৃতীয় হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। কিন্তু মেডিকেলে পড়াশোনার খরচ অনেক। প্রথম বর্ষে ভর্তি, বইসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম কিনতেই ৪০ হাজার টাকা লেগে যায়। এরপর প্রতিবছর ছয় থেকে সাত হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু এই খরচ দেওয়ার সামর্থ্য নেই তাঁর মা-বাবার।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, বীরগঞ্জ উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের কাটগর মাদ্রাসার পেছনে ৩ শতাংশ জমির ওপর দুটি চালাঘর। চারপাশে বাঁশের বেড়া। একটি ঘর হেলে পড়েছে।

সজীব রায় জানালেন, শুধু চিকিৎসক নয়, নিজেকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে গরিবের সেবা করতে চান তিনি।

সজীব রায় বলেন, ‘কষ্টের সংসারে লেখাপড়া চালিয়ে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু পড়ার খরচ চলবে কীভাবে, সে কথা ভেবে মা–বাবাসহ সবারই দুশ্চিন্তা হচ্ছে। বাবা বলছেন, ভর্তির খরচের জন্য দরকার হলে বাড়ির ভিটাটাও বেচে দেবেন।’

পড়াশোনার বিষয়ে সজীব বলেন, ‘অভাব দেখে মা–বাবার কাছে কখনো বাড়তি কিছু আবদার করতে পারিনি। তাঁরা আমাকে সামন্য কিছু টাকা দিতেন। এসএসসি পর্যন্ত আমি শুধু পদার্থবিজ্ঞান প্রাইভেট পড়েছিলাম। এলাকার এক বড় ভাই আমাকে সব সময় লেখাপড়ায় সাহায্য করতেন।’

সজীবের বাবা মনধর জানালেন, তাঁর সম্পত্তি বলতে আছে ৩ শতাংশের বসতভিটা। গাছ কেটে যেটুকু পান, তা দিয়ে অভাবের সংসার কোনোমতে চলে যায়।

সজীবের মা চারুবালা বলেন, ‘অভাবের কারণে সজীব কত দিন না খেয়ে স্কুলে গেছে ঠিক নেই।’

প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত সজীবের ফল ঈর্ষণীয়। তিনি বীরগঞ্জের কাটগর আদিবাসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় উপজেলার মধ্যে প্রথম হন। ২০১৩ সালের জেডিসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পান সজীব। গোলাপগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৬ সালের এসএসসি ও সৈয়দপুর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০১৮ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পান।