প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সান্ধ্য কোর্স নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি সরকার দেখছে। তবে সান্ধ্য কোর্স বন্ধ করতে আইন করার প্রয়োজন নেই। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অথবা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ব্যবস্থা নিতে পারে।
আজ বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সাংসদ মুজিবুল হকের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়ে মুজিবুল হক বলেন, জনগণের টাকায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। শিক্ষকদের ব্যয় ভাতা দেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষকেরা সান্ধ্য কোর্সের নামে একটা শিক্ষা–বাণিজ্য আরম্ভ করেছেন। এতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তিনি সান্ধ্য কোর্স বন্ধে পদক্ষেপ ও আইন করার পরামর্শ দেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একসময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় সেশনজট বেশি ছিল। যে কারণে দুই শিফটে পড়ানো বা সান্ধ্য কোর্সে পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এখন সরকার সারা দেশে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় করছে। শিক্ষার প্রসার ঘটছে। তবে এটা ঠিক, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকেরা নিজের প্রতিষ্ঠানে ক্লাস নেওয়ার চেয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে বেশি আন্তরিক। তাতে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে মাঝেমধ্যে সমস্যা হয়। এগুলো আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রণে আসছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবকিছুতে আইন লাগে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অথবা ইউজিসি ব্যবস্থা নিতে পারে। এটা কোনো বিষয় না। এ বিষয়টা আমরা দেখব, কেন সমস্যা দেখা দিচ্ছে।’
একটা নিয়ন্ত্রণ করলে আরেকটার উৎপত্তি
সরকারি দলের সাংসদ দিদারুল আলমের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মাদক একটা সামাজিক ব্যাধি হিসেবে দেখা দিয়েছে। দেশে কীভাবে মাদক ঢোকে, দেশের অভ্যন্তরে কেউ মাদক প্রস্তুত করে কি না বা যারা সেবন, ক্রয়–বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত, তাদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সরকার সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক—তিনটিকেই সমানভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে এবং যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে।
সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে যা যা করণীয় সরকার করছে। সে সঙ্গে সমাজের সব শ্রেণি–পেশার মানুষকেও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। অভিযানের ফলে মাদক অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমস্যা হলো, একটা মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে করতে আরেকটি আসে। সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে করতে আরেকটার উৎপত্তি ঘটে।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত নয়
তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি সম্পূরক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কে ভালো কে মন্দ, কে বেহেশতে যাবে, কে দোজখে যাবে, সেটা আল্লাহ বিচার করবেন। সে বিচারটা বান্দা কেন করবে? কে মুসলমান, কে মুসলমান না, কে ধর্ম ভালো পালন করে, কে ধর্ম পালন করেন না, সেটা আল্লাহ বিচার করবেন। যে যা করবে, তার ফল তাকেই ভোগ করতে হবে। অন্য কেউ ভোগ করে দেবে না। এই অবস্থায় কেন এই রেষারেষিটা থাকবে?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী, তাহলে এই বিচারের পথে কেউ যেতে পারে না। এটা যাওয়া মানে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস হারানো।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ভালো মুসলমান, না ওনি ভালো মুসলমান, এটা বলার দায়িত্ব তো আল্লাহ কাউকে দেয়নি, এটা বিচার করার অধিকারও কাউকে দেয়নি। আল্লাহ তো বারবার বলেছেন, কোরআন শরিফেও বলা আছে, শেষ বিচার আল্লাহ রাব্বুল আলামিন করবেন। সে ধৈর্যটা থাকবে না কেন?’
১০ বছরে সাড়ে ৪ লাখের বেশি কর্মী ফেরত
সংরক্ষিত আসনের আরমা দত্তের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা জানান, ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নানা কারণে আউট পাস নিয়ে ৪ লাখ ৬৭ হাজার ৫০২ জন কর্মী বিদেশ থেকে ফেরত এসেছেন।
নারী কর্মীদের সহায়তার জন্য গত বছর ডিসেম্বরে ‘নারী কর্মী সুরক্ষা সেল‘ গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সুরক্ষা সেল গঠনের পর যাচাই–বাছাইপ্রক্রিয়া বেশি কার্যকর হওয়ায় গত এক মাসে একজন নারী কর্মীকেও দুর্ভোগের শিকার হতে হয়নি।
সরকারি দলের এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বর্তমানে মোবাইল গ্রাহক ১৬ কোটি ৫৫ লাখ ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৯ কোটি ৯১ লাখ। টেলিডেনসিটি ৯৯ দশমিক ২৪ শতাংশ আর ইন্টারনেট ডেনসিটি ৫৯ দশমিক ০৮ শতাংশ।