রাজধানীর তেজগাঁওয়ের খেলাঘর বাজার থেকে বাজার করছিলেন ভ্যানচালক আক্তার মিয়া। তিনি আধা কেজি পেঁয়াজ ৩৫ টাকায়, ২৫০ গ্রাম অ্যাংকর ডাল ১৫ টাকায়, ৬০ গ্রাম লইট্টা মাছের শুঁটকি ৫০ টাকায় এবং ১০ টাকায় এক পুঁটলি খোলা সয়াবিন তেল কেনেন। মোট খরচ হয় ১১০ টাকা। তিনি বলেন, ‘আমগর মতন গরিবের কথা ভাবার সময় তো কারও নাই।’
সাত দিনের ব্যবধানে সংসারের প্রয়োজনীয় ১০টি নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। পণ্যগুলো হচ্ছে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল, মসুর (চিকন) ও অ্যাংকর ডাল, দেশি পেঁয়াজ, চীন থেকে আমদানি হওয়া রসুন, খোলা আটা ও প্যাকেট ময়দা, লবণ এবং ফার্মের মুরগির ডিম।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর একাধিক বাজার ও পাড়া-মহল্লার দোকানে গিয়ে এ পণ্যগুলোর দাম কেজিতে ২ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। আর ফার্মের মুরগির ডিমের দাম বেড়েছে প্রতি হালিতে ৪ টাকা।
দুদিন আগে (মঙ্গলবার) ২০৪ লিটারের এক ড্রাম খোলা সয়াবিন তেল ৩৩ হাজার ৬০০ টাকা ও পাম সুপার তেল ২৯ হাজার ৬০০ টাকায় কিনেছি। এ হিসাবে পাইকারিতে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনের দাম ১৬৪ টাকা ৭০ পয়সা এবং পাম তেলের দাম ১৪৫ টাকার কিছু বেশিশুভ মণ্ডল, দোকানের মালিক
অন্যদিকে বিভিন্ন কোম্পানির পরিবেশকেরা তেল নিয়মিত সরবরাহ করছেন না বলে জানিয়েছেন দোকানিরা। ফলে অনেক মুদিদোকানে বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। খোলা সয়াবিন তেল ও পাম সুপার তেল পাওয়া গেলেও বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে।
গতকাল রাজধানীর ফার্মগেট এবং তেজগাঁও এলাকার পূর্ব রাজাবাজার, তেজকুনীপাড়া, মণিপুরিপাড়া এলাকার একাধিক বাজার ও অধিকাংশ দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি করতে দেখা যায়নি।
রাজধানীর তেজকুনীপাড়া খেলাঘর মাঠ বাজারের সুমা জেনারেল স্টোর নামের একটি দোকানে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৭০ টাকা এবং পাম সুপার ১৫০ টাকা বিক্রি করতে দেখা যায়। দোকানটির মালিক শুভ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুদিন আগে (মঙ্গলবার) ২০৪ লিটারের এক ড্রাম খোলা সয়াবিন তেল ৩৩ হাজার ৬০০ টাকা ও পাম সুপার তেল ২৯ হাজার ৬০০ টাকায় কিনেছি। এ হিসাবে পাইকারিতে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনের দাম ১৬৪ টাকা ৭০ পয়সা এবং পাম তেলের দাম ১৪৫ টাকার কিছু বেশি।’ তেজকুনীপাড়া এলাকার মঈন উদ্দিন ট্রেডার্স নামের একটি মুদিদোকানে মোটা গুটি স্বর্ণা চালের কেজি ৪৬ টাকা ও মাঝারি আকারের বিআর-২৮ চাল ৫২ টাকায় বিক্রি করা হয়। এ দুই ধরনের চালের দাম নতুন করে না বাড়লেও বেড়েছে সরু মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দাম।
দোকানমালিক শাহ পরান প্রথম আলোকে বলেন, কেজিতে ২ টাকা বেড়ে মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায় এবং কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকায়।
সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মসুর ডালের (চিকন দানা) দাম। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। এ ছাড়া নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ চিকন দানার মসুর ডালের পরিবর্তের অ্যাংকর ডাল কেনেন। সম্প্রতি এ ডালের দামও কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা দরে।
এ ছাড়া চীন থেকে আমদানি করা রসুনের দাম কেজিতে ১০ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। গতকাল পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় মুদিদোকানি গোলাম রাব্বানি এক কেজি রসুন (চীনা) ১৪০ টাকায় ও দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৭০ টাকায় বিক্রি করেন।
দাম বেড়েছে খোলা আটা ও মোড়কজাত ময়দারও। আটায় কেজিতে বেড়েছে ২ টাকা, মোড়কজাত ময়দায় কেজিতে ৫ টাকা। গতকাল পাড়া-মহল্লার মুদিদোকানে প্রতি কেজি খোলা আটা ৩৮ টাকা ও মোড়কজাত ময়দা প্রতি কেজি ৬২ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। প্রতি কেজি লবণের দাম ৩ টাকা বেড়ে ৩৫ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে এক মাস আগে খোলা আটার প্রতি কেজি দাম ছিল ৩৩ থেকে ৩৬ টাকা, যা এখন ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়েছে ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। আর মোড়কজাত ময়দার কেজি ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, যা এখন ৫২ থেকে ৬০ টাকা। অর্থাৎ দাম বেড়েছে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
ফার্মের মুরগির ডিমের দামও হালিতে ৪ টাকা বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহে ৩৬ টাকা হালি ও প্রতি ডজন ১০০ থেকে ১০৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। গতকাল তা প্রতি হালি ৪০ টাকা ও প্রতি ডজন ১১৫ টাকায় বিক্রি করা হয়।
তবে ব্রয়লার মুরগি ও সোনালিকা (কক) মুরগির দামে কোনো পরিবর্তন নেই। ব্রয়লার ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা এবং সোনালিকা ২৭০ থেকে ২৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।