সাত্তার মাদবর মঙ্গল মাঝির ঘাট আপাতত চালু হচ্ছে না

পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা লাগার কারণে ঘাট সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

পদ্মা সেতুর পিলারে পরপর চারবার ফেরির ধাক্কার পর সেতু এলাকা এড়ানোর জন্য বাংলাবাজার ঘাটকে সরিয়ে সাত্তার মাদবর মঙ্গল মাঝির ঘাট থেকে ফেরি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। তবে নাব্যতা–সংকটের কারণে আপাতত ঘাটটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। আগামী রোববার ঘাটটি চালুর চেষ্টা করা হবে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) বাণিজ্য বিভাগের পরিচালক এস এম আশিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, শিমুলিয়া–মাঝিরকান্দি রুটে ফেরি চালানো বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার অনলাইনে একটি সভা হয়। সেখানে বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসি চেয়ারম্যান ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। নাব্যতা–সংকটের কারণে আপাতত ফেরি চালানো যাচ্ছে না।

বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতুর ৩৭ থেকে ৩৯ নম্বর পিলার পর্যন্ত এলাকায় পানির গভীরতা কমে গেছে। এই চ্যানেলটি ড্রেজিং করতে হবে। এ ছাড়া যানবাহন মঙ্গল মাঝির ঘাটের যে সড়কটি ব্যবহার করবে, সেটি প্রশস্ত নয়। এই সড়কের গনির মোড়ের জায়গাটি আরও প্রশস্ত করতে হবে। রোববার ঘাটটি চালুর চেষ্টা করা হবে।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানিয়েছে, গতকাল বুধবার ৩৭ থেকে ৩৯ নম্বর পিলার এলাকার চ্যানেলে পানির গভীরতা ছিল ১২ ফুট। আজ গভীরতা পাওয়া গেছে ৬ ফুট। সংস্থার হাইড্রোগ্রাফি বিভাগ নিয়মিত পানির গভীরতা পর্যবেক্ষণ করছে। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে এই বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের কথা রয়েছে। সে বৈঠকে ঘাটে ফেরি পরিচালনা বিষয়ের সার্বিক বিষয়াবলি পর্যালোচনা করা হবে।

এর আগে গতকাল রাতে বিআইডব্লিউটিএর সহকারী প্রকৌশলী মো. ফয়সাল প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, সাত্তার মাদবর মঙ্গল মাঝির ঘাটটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে চালু করার নির্দেশনা রয়েছে। আজ পরীক্ষামূলকভাবে একটি ফেরি চালানো হবে। কাল শুক্রবার ঘাট থেকে ফেরি চলাচল শুরু করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে।

বিআইডব্লিউটিএর নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগের একজন সহকারী পরিচালক প্রথম আলোকে বলেন, সাত্তার মাদবর মঙ্গল মাঝিরঘাট-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল করবে পদ্মা সেতুর ভাটিতে। পদ্মা সেতুর চ্যানেল দিয়ে এখন লঞ্চ চলাচল করছে। ওই পথ ধরেই ফেরি চলবে। ফেরিগুলো অন্তত তিন কিলোমিটার পথ পদ্মা সেতুর পাশ দিয়ে চলবে।

মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে ১৮ আগস্ট থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। স্রোতের তীব্রতা না কমা পর্যন্ত এই নৌপথে ফেরি ছাড়া হবে না বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার সাত্তার মাদবর মঙ্গল মাঝিরঘাট এলাকায় ২১ আগস্ট নতুন করে ফেরিঘাট নির্মাণের কাজ শুরু করে বিআইডব্লিউটিএ।

সাত্তার মাদবর মঙ্গল মাঝির লঞ্চঘাট-শরীয়তপুর সড়কের মাথায় পদ্মা নদীতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে কিছু অংশ ভরাট করা হয়েছে। সেখানে ১০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৫০ ফুট প্রশস্ত ঘাট নির্মাণ করা হচ্ছে। বালুভর্তি জিও ব্যাগের ওপর বাঁশ, ইট ও বালু দিয়ে ঘাটটি নির্মাণ করা হয়েছে। ঘাট নির্মাণ করতে ৫০-৬০ লাখ টাকা খরচ হবে।

বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসির সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও জরিপ বিভাগ থেকে সাত্তার মাদবর মঙ্গল মাঝিরঘাট-শিমুলিয়া নৌপথের জরিপ করা হয়। ওই নৌপথের জাজিরার নাওডোবা পদ্মা সেতুর চ্যানেল ধরে ভাটিতে ফেরিগুলো চলাচল করবে। ওই চ্যানেল দিয়ে লৌহজং টার্নিং হয়ে শিমুলিয়া যাতায়াত করবে। তখন অন্তত তিন কিলোমিটার এলাকা পদ্মা সেতুর পাশ দিয়ে ফেরিগুলো চলাচল করবে।

বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। পারাপার হতে সময় লাগত ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট থেকে ২ ঘণ্টা। সাত্তার মাদবর মঙ্গল মাঝিরঘাট-শিমুলিয়া নৌপথের দূরত্ব আট কিলোমিটার। পারাপারে সময় লাগবে ১ ঘণ্টা থেকে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট। নতুন এ ঘাটের জন্য একটি রো রো ফেরির পন্টুন আনা হয়েছে। তিন থেকে চারটি কে–টাইপ ফেরি চলাচলের কথা রয়েছে এ ঘাট থেকে।