সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলায় আসামির তালিকা থেকে অব্যাহতি চেয়ে তানভীর রহমানের করা আবেদনটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের শুনানি নিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এই আদেশ দেন।
আদেশে আদালত বলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এ আবেদনের ওপর এই আদালতের শুনানির এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তবে আদালত মনে করেন, এই আবেদনের ওপর শুনানির এখতিয়ার রয়েছে। তবে রাষ্ট্রপক্ষ আপত্তি তোলায় তানভীর রহমানের করা আবেদনটি এই আদালতের কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হলো।
আদালতের এই আদেশের পর আসামি তানভীর রহমানের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ সাংবাদিকদের বলেন, এই আবেদনের ওপর শুনানির এখতিয়ার আদালতের রয়েছে, আদালত নিজেই তা বলেছেন। তারপরও রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আপত্তি তোলায় আদালত আবেদনটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। যে কারণে চলতি সপ্তাহেই প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করা হবে। ওই আদালতে কিংবা অন্য কোনো আদালতে তানভীরের আবেদনের ওপর শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেওয়ার আবেদন করবেন।
এর আগে গত ১৪ নভেম্বর সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার অগ্রগতি প্রতিবেদন এবং তানভীর রহমানের সম্পৃক্ততা নিয়ে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। আদালতের আদেশ অনুযায়ী র্যাবের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার আজ বুধবার র্যাবের প্রতিবেদনটি আদালতের সামনে উপস্থাপন করেন। এই আবেদনের ওপর আদালতের শুনানির এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অমিত তালুকদার।
র্যাবের প্রতিবেদন সম্পর্কে আসামি তানভীর রহমানের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘তদন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন নতুন কোনো তথ্য নেই। র্যাব আগে যেসব কথা বলেছে, সেগুলো নতুন করে টাইপ করে আদালতের কাছে হাজির করা হয়েছে। তানভীর রহমানের সম্পৃক্ততার বিষয়ে র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তানভীর রহমানের সঙ্গে নিহত রুনির কথোপকথন রয়েছে। আমরাও বলছি, তানভীর নিহত রুনির বন্ধু ছিলেন। মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন।’
র্যাবের প্রতিবেদন বলছে, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা আলামত যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে রাসায়নিক ফরেনসিক পরীক্ষা করা হয়। সেখানে দুজন অজ্ঞাত পুরুষের ডিএনএর উপস্থিতি মেলে। তবে সেই দুজন অজ্ঞাত পুরুষকে চিহ্নিত করতে পারেনি র্যাব। সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার তানভীর রহমান এই মামলায় জামিনে আছেন। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না হওয়া পর্যন্ত তানভীরকে নিম্ন আদালতে এ মামলায় হাজির হওয়া থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে আইনজীবীর মাধ্যমে তিনি হাজিরা দিতে পারবেন বলেও আদেশে বলা হয়।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাড়িতে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির লাশ পাওয়া যায়। সাগর তখন মাছরাঙা টিভিতে আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের সময় বাসায় ছিল তাঁদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ।
সব মিলিয়ে এ মামলায় মোট আটজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মো. সাইদ, মিন্টু, কামরুল হাসান ওরফে অরুণ, সাগর-রুনির ভাড়া বাসার নিরাপত্তাপ্রহরী এনামুল, পলাশ রুদ্র পাল ও নিহত দম্পতির বন্ধু তানভীর রহমান। তাঁদের মধ্যে প্রথম পাঁচজনই মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক নারায়ণ চন্দ্র হত্যার ঘটনায় র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেপ্তার হন। প্রথম পাঁচজন ও নিরাপত্তারক্ষী এনামুল এখনো এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাবাস করছেন।