একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে করা আপিলের ওপর রায় যেকোনো দিন।
আজ বুধবার প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ রায় অপেক্ষমাণ রাখেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এই দণ্ড থেকে অব্যাহতি চেয়ে আপিল করেন সাঈদী। অপরদিকে দণ্ড বহাল ও ছয় অভিযোগে দণ্ড ঘোষণার আরজি জানিয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
দুটি আপিলের ওপর গতকাল মঙ্গলবার শুনানি শেষ হয়। এ দিন আসামিপক্ষের যুক্তি খণ্ডন শেষে রাষ্ট্রপক্ষ জবাব দেয়। তবে গতকাল রায়ের দিন ধার্য না করে আজ দুটি আবেদনের ওপর আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছিলেন আদালত। আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের করা পৃথক দুটি আবেদন আজ খারিজ করেন আদালত। একই সঙ্গে আপিলের ওপর রায় অপেক্ষমাণ রাখেন। যেকোনো দিন রায় ঘোষণা করবেন আদালত। এর মধ্য দিয়ে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দ্বিতীয় কোনো মামলা আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হতে যাচ্ছে।
ইব্রাহিম কুট্টি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ-সংক্রান্ত নথি তলবের জন্য গত রোববার আবেদন করে আসামিপক্ষ। আবেদনে মামলার রেজিস্টার খাতা (জিআর) তলবের আরজি জানানো হয়। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের পর দালাল আইনে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মামলার নথি তলবের জন্য আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। গতকাল এ দুটি আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হয়। আবেদন দুটি আজ খারিজ করেন আদালত।
পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আশা করি, ন্যায়বিচার পাব। ইব্রাহিম কুট্টি ও বিসাবালীকে হত্যার দায়ে ট্রাইব্যুনাল সাঈদীকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন। আপিল বিভাগ তা বহাল রাখবেন। এ ছাড়া বাকি ছয়টি অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল তাঁকে কোনো সাজা দেননি, সেগুলোতেও সর্বোচ্চ আদালত সাজা দেবেন। এই ছয়টি অভিযোগে কী সাজা দেওয়া হবে, তা আদালতের বিষয়। তবে আমরা সাজা চেয়েছি।’
মাহবুবে আলম আরও বলেন, দুটি আবেদনের বিষয়ে আদেশের জন্য আজ দিন ধার্য ছিল। আবেদন দুটি খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। তবে রাষ্ট্রপক্ষের লিখিত যুক্তি আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।
একাত্তরে সাঈদী কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না বলে আসামিপক্ষের দাবি প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘কাদের মোল্লাও বলেছিলেন, তিনি একাত্তরে কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। কসাই কাদের নামের আরেকজন ব্যক্তি এসব অপরাধ করেছেন। কিন্তু আদালতে কাদের মোল্লার অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। আমরা আশা করি, সাঈদীর মামলায়ও একই ঘটন ঘটবে।’
সাঈদীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য যে ইব্রাহিম কুট্টি হত্যা মামলা-সংক্রান্ত নথি তলবের আবেদনটি আদালত খারিজ করে দিয়েছেন। তার পরও আমরা আশাবাদী যে ন্যায়বিচার পাব। সাঈদীর বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে, সর্বোচ্চ আদালত তাঁকে সে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেবেন।’
গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। সাঈদীর বিরুদ্ধে আনা ২০টি অভিযোগের মধ্যে আটটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে ইব্রাহিম কুট্টি হত্যাকাণ্ড এবং বিসাবালী হত্যাকাণ্ডের দায়ে সাঈদীকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। এ দুটি অভিযোগে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ায় অপর ছয়টি অভিযোগের ক্ষেত্রে আলাদা দণ্ড দেননি ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৮ মার্চ সাঈদী আপিল করেন। আর দোষী সাব্যস্ত হওয়া ছয় অভিযোগে সাজা চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাগুলোর মধ্যে প্রথম আপিল নিষ্পত্তি হয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলায়। গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল-২ কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিলেও আপিল বিভাগ গত ১৭ সেপ্টেম্বর তাঁকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। ১২ ডিসেম্বর রাতে ওই দণ্ড কার্যকর হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে একমাত্র ফাঁসির ঘটনাও এটি।