চট্টগ্রাম

সাংসদ বদি ও ইয়াবা ব্যবসায়ীকে সম্মাননা!

জাতীয় আয়কর দিবসে গত সোমবার কক্সবাজার কর অঞ্চল–৪ এর সর্বোচ্চ করদাতার সম্মাননা ক্রেস্ট আবদুর রহমান বদির হাতে তুলে দেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন l প্রথম আলো
জাতীয় আয়কর দিবসে গত সোমবার কক্সবাজার কর অঞ্চল–৪ এর সর্বোচ্চ করদাতার সম্মাননা ক্রেস্ট আবদুর রহমান বদির হাতে তুলে দেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন l প্রথম আলো

সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে প্রায় তিন সপ্তাহ আগে কক্সবাজার-৪ আসনের সাংসদ আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। ওই মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই আয়কর বিভাগ থেকে কক্সবাজার জেলার সর্বোচ্চ করদাতার সম্মাননা পেলেন তিনি।

একইভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা ইয়াবা ব্যবসায়ীর তালিকার শীর্ষে থাকা কক্সবাজারের টেকনাফের আবদুস শুক্কুরও পেয়েছেন একই সম্মাননা। তিনি সাংসদ আবদুর রহমানের ছোট ভাই।

গত সোমবার চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে সড়ক ও জনপথ বিভাগের মাঠে জাতীয় আয়কর দিবসে আবদুর রহমান বদির হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন। পলাতক আবদুস শুক্কুরের পক্ষে ক্রেস্ট গ্রহণ করেন সাংসদ নিজেই। ২০১৩-১৪ করবর্ষে কক্সবাজার কর অঞ্চল-৪ থেকে সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী হিসেবে সাংসদ প্রথম এবং তাঁর ভাই শুক্কুর তৃতীয় শীর্ষ করদাতা নির্বাচিত হন।

আদালতে বিচারাধীন মামলার আসামির আয়কর বিভাগ থেকে সম্মাননা পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, এই মামলার বিচার শেষ হয়নি। আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীকে সর্বোচ্চ করদাতার সম্মাননা দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

দুদক সূত্র জানায়, সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে সাংসদ আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে গত ২১ আগস্ট রমনা থানায় মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক আবদুস সোবহান। তাঁর বিরুদ্ধে ১০ কোটি ৮৬ লাখ ৮১ হাজার ৬৬৯ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য গোপন এবং অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের বৈধতা দেখাতে কম দামি সম্পদকে বেশি দাম দেখানোর অভিযোগে এ মামলা করা হয়। সম্পদ অর্জনের উৎস হিসেবে আমদানি-রপ্তানির ব্যবসার কথা বললেও বদি দুদকের কর্মকর্তার কাছে এ-সম্পর্কিত কোনো প্রমাণাদি দেখাতে পারেননি।

আবদুস শুক্কুরের নামে মামলা করে বিজিবি। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর টেকনাফ স্থলবন্দরসংলগ্ন এলাকা দিয়ে পাচারের সময় দেড় লাখ ইয়াবা বড়ি জব্দ করে বিজিবি। বিজিবি সূত্র জানায়, এ ঘটনায় আটক দুই পাচারকারী জিজ্ঞাসাবাদে জানান, আবদুস শুক্কুররের জন্য এই চালান আনা হয়েছে। এ কারণে বিজিবি তাঁকে প্রধান আসামি করে টেকনাফ থানায় মামলা করে। তবে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পুলিশ তাঁকে এ মামলা থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করে কক্সবাজারের আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ৪২ বিজিবি টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ বলেন, মূল আসামিকে বাদ দেওয়ায় অভিযোগপত্র গ্রহণের শুনানির ধার্য দিনে অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি দেবেন বাদী। এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া আছে।

এমন দুই ব্যক্তিকে কীভাবে সম্মাননা দেওয়া হলো—এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-১-এর কমিশনার মো. দবির উদ্দিন বলেন, ‘সম্মাননা দেওয়ার ক্ষেত্রে বকেয়া কর, বিতর্কিত কর দাবিনামা, আপিল ট্রাইব্যুনালে মামলা, ব্যাংকে ঋণখেলাপি এবং কোনো মামলায় দোষী সাব্যস্ত কি না—এসব বিষয় যাচাই করা হয়। তবে সাংসদ এবং তাঁর ভাই আবদুস শুক্কুরের বিরুদ্ধে এসব বিষয়ে কোনো প্রমাণ ছিল না। মামলা থাকলেও এখনো আদালতের রায়ে দোষী সাব্যস্ত হননি তাঁরা।’

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে সাংসদ আবদুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

সম্মাননা নেওয়ার পর আবদুর রহমান বদি সোমবার চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে আমি সাত কোটি ৭৪ লাখ টাকা আয়কর সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছি। অর্জন করেছি সর্বোচ্চ করদাতার সম্মান। অথচ দুর্নীতি দমন কমিশন আমার দুর্নীতি তদন্তের নামে সুনাম ক্ষুণ্ন করছে। কর ফাঁকিবাজদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে আমরা যাঁরা কর দিচ্ছি, তাঁদের হয়রানি করছে।’

সম্মাননা নিয়ে আবদুর রহমান দুদকের চেয়ারম্যানকেও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। তিনি দুদকের চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনার নামও বদি, আমার নামও বদি। বদি বদিকে যদি তাড়ান সব গুঞ্জাস (গোপন কথা) ফাঁক ফাঁক হয়ে যাবে আপনার ভিতরে কী আছে, কীভাবে সাদা কালা করতেছেন, জনগণ সবই জানতে চায়।’

জানতে চাইলে দুদকের চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান বলেন, ‘কে কী বলল, তা নিয়ে চিন্তা করার কারণ নেই। আমি বলব, আরেকজন বলবেন—এসব বাদানুবাদে লাভ নেই। কমিশন যা করেছে, তা আইনি প্রক্রিয়ায় করেছে। মামলা হয়েছে, তদন্ত চলছে। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়ায়।’