কুয়েতে আটক বাংলাদেশের সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে কর্মী নিয়োগ, রেসিডেন্সি আইনের লংঘন ও ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ আনা হচ্ছে। দেশটির তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তি আর সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব অভিযোগ আনা হচ্ছে।
কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিশন কাজী শহিদের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার করা মামলার বিষয়ে ৬ জুলাই পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন। আর ওই শুনানির আগে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে আটক রাখা হবে।
কুয়েতের কূটনীতিক সূত্রে জানা গেছে, কুয়েতের সিফাত বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত কাজী শহিদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম গত সপ্তাহ থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে। গত সপ্তাহে তদন্তের অংশ হিসেবে কুয়েত সিআইডির কর্মকর্তারা তাঁর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কুয়েতিয়া মারাফিয়ায় যান। সেখানে গিয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। সেখানে কুয়েতিয়া মারাফিয়ার দুই কর্মকর্তা আটক সাংসদের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। বেশ কিছুদিন ধরে ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ওই যুগল দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশের নাগরিক। তদন্ত কর্মকর্তারা কুয়েতিয়া মারাফিয়ায় অভিযান শেষে সেখানে রেড স্টিকার দিয়ে এসেছেন। অর্থাৎ পরবর্তী নির্দেশ দেওয়া না পর্যন্ত ওই দপ্তর থেকে কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না।
তদন্ত কর্মকর্তাদের সূত্রের উল্লেখে করে কুয়েতের আরবী দৈনিক আল কাবাস বুধবার জানিয়েছে, বাংলাদেশের সাংসদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে কুয়েতের তিন সরকারি কর্মকর্তাকে আটক করেছে সেখানকার সিআইডি। গত মঙ্গলবার রাতে তাদের তিনজনকে আটক করা হয়। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের আটক রাখার নির্দেশ দিয়েছেন পাবলিক প্রসিকিউটর।
কুয়েতের কূটনৈতিক ও ব্যবসায়িক সূত্রগুলো এই প্রতিবেদককে জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার আটক তিন জন কর্মকর্তার একজন হচ্ছেন কুয়েতের জনশক্তি কর্তৃপক্ষের সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি। আটক ওই আন্ডার সেক্রেটারি দেশটির প্রভাবশালী প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার আত্মীয়। এরই মধ্যে পাবলিক প্রসিকিউশিনের সুপারিশে তাঁকে সরকার তিন মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করেছে। কাজী শহীদ তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে জানিয়েছেন, ওই কর্মকর্তা তাঁকে ব্যবসায়িক কাজে সুবিধা পেতে সাহায্য করেছেন।
মানব পাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগে এখন পর্যন্ত সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম ওরফে পাপুল, তাঁর প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মুর্তজা মামুন এবং কুয়েতের তিনজন সহ মোট পাঁচ জনকে আটক করা হলো।
জিজ্ঞাসাবাদে যা বলেছেন সাংসদ
কুয়েতের ইংরেজি দৈনিক আরব টাইম ও কুয়েত টাইমস এবং আরবী দৈনিক আল কাবাস গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে খবর ছেপেছে। বাংলাদেশের আটক সাংসদ তদন্ত কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, তিনি কাজ করার জন্য প্রথম কুয়েতে যান ১৯৮৪ সালে। এরপর থেকে সব সময় কুয়েতের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে কাজ করছেন। এই দীর্ঘ সময়ে কাজ করতে গিয়ে কুয়েতের বিভিন্ন স্তরের অনেকের সঙ্গে তাঁর বন্ধুতা হয়েছে। কিন্তু কারো সঙ্গেই সন্দেহভাজন কোন কাজে জড়াননি।
সাংসদ কাজী শহিদ জানান তাঁর স্ত্রীও বাংলাদেশের একজন সাংসদ। তাদের দুজনের কুয়েতে চারটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেগুলো মূলত ক্লিনিংয়ের সঙ্গে জড়িত। কুয়েত সরকারে দরপত্রের মাধ্যমে তাঁর কাছে ৩৪ টি কাজ রয়েছে। ওই কাজগুলোর জন্য তিনি ৯ হাজার কর্মী নিয়োগ করেছেন।
বিভিন্ন জনকে ঘুষ দেওয়া ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কাজী শহিদ। তিনি তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে বলেছেন, বিভিন্ন সংস্থায় কর্মরত কুয়েতের বন্ধুদের তিনি উপহার দিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন। এর বিনিময়ে কুয়েতের বন্ধুরা তাঁকে আর্থিক লেনদেনে সহায়তা করেছেন।