দণ্ডবিধি ও অফিশিয়াল সিক্রেক্টস অ্যাক্টের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের জামিন আবেদন বিষয়ে শুনানি শুরু হয়েছে। আজ রোববার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে শুনানি শুরু হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হয়। জামিন আবেদনের শুনানি গ্রহণ করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকী বিল্লাহ। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী শুনানিতে দুই পক্ষের আইনজীবীরা ভার্চ্যুয়ালি অংশ নেন। তবে আদালত সেদিন তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। রাষ্ট্রপক্ষের তথ্য উপস্থাপন ও জামিন বিষয়ে আজ আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত।
পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে ১৭ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে হেনস্তা ও নির্যাতন করা হয়। রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁকে শাহবাগ থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাত পৌনে ১২টার দিকে তাঁর বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়।
শুনানিতে রোজিনা ইসলামের আইনজীবীরা বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, সৃজিত ও উদ্দেশ্যমূলক। জামিন পাওয়ার অধিকার তিনি সংরক্ষণ করেন। এটা তাঁর প্রাপ্য। তবে মামলার ধারাগুলো জামিন অযোগ্য বলে দাবি করে রাষ্ট্রপক্ষ।
শাহবাগ থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১৮ মে রোজিনা ইসলামকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। পুলিশ তাঁকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে। শুনানি নিয়ে আদালত রিমান্ডের আবেদন নাকচ করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আর জামিন আবেদনের ওপর অধিকতর শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন রাখেন। এই আদেশের পর রোজিনা ইসলামকে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে পাঠানো হয়।
রোজিনা ইসলামের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বৃহস্পতিবার আদালতে শুনানিতে অংশ নিয়ে বলেছিলেন, এজাহারে চুরির কথা বলা হয়েছে। যদি কেউ বলে, আসামি ডকুমেন্ট বা প্রোপার্টি চুরি করেছে, তাহলে অবশ্যই এর বর্ণনা থাকতে হবে। কিন্তু এজাহারের কোথাও সেই বর্ণনা নেই। জব্দ তালিকায় দেখা যায়, কথিতমতে ডকুমেন্টস কিংবা মোবাইল ফোনসহ যা কিছুই থাকুক না কেন, তা রোজিনা ইসলামের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়নি।
এহসানুল হক সমাজী আরও বলেন, রোজিনা একজন নারী, মা এবং অসুস্থ। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী একজন নারী জামিন পাওয়ার অধিকারী। এজাহারে কথিতমতে কোনো ডকুমেন্ট চুরির বর্ণনাও নেই, এমনকি তা তাঁর কাছ থেকে উদ্ধারও হয়নি; গুপ্তচরবৃত্তির কোনো অভিযোগ নেই, কোনো রংফুল কমিউনিকেশনের অভিযোগও নেই; তাই তিনি জামিন পাওয়ার যোগ্য।
জামিনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান আদালতকে বলেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম বিদেশ থেকে টিকা আনার জন্য মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্তের অনুলিপি ও গোপনীয় নথি নিয়ে লুকিয়ে রাখেন। মামলার সব ধারা জামিন অযোগ্য।