তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘সরকার সম্প্রচার সাংবাদিক ও কর্মীদের চাকরি ও আনুষঙ্গিক সুবিধার আইনি সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে। আসুন, টেলিভিশন শিল্পকে বাঁচাতে সবাই একসঙ্গে কাজ করি। যদি “সম্প্রচার আইন” পাস হয়, তবে আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) সেমিনার হলে আয়োজিত ‘সম্প্রচার মাধ্যমের সংকট’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্য তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
পিআইবির মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদের সভাপতিত্বে বেসরকারি টেলিভিশন সাংবাদিকদের সংগঠন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি) ও প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি) যৌথভাবে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের গণমাধ্যম খাতে বড় ধরনের বিপ্লব হয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশে প্রথম কোনো বেসরকারি টেলিভিশনকে লাইসেন্স দেন। এখন দেশে প্রায় ৩৪টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে এবং ৪৪টি চ্যানেল লাইসেন্স পেয়েছে।
হাছান মাহমুদ বলেন, টেলিভিশন শিল্পটি বিস্তৃত হচ্ছে। বিজ্ঞাপন কমে যাওয়াসহ বেশ কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এখন শিল্পটিকে টিকে থাকতে হলে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আমি অক্লান্তভাবে সাংবাদিকদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু এ জন্য আমাকে সংশ্লিষ্ট সবার সর্বাত্মক সহযোগিতা দরকার। সাংবাদিকেরা সমাজের দর্পণ। তাঁদের সুরক্ষা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।’
গণমাধ্যম সম্প্রচারের ডিজিটালাইজেশন সম্পর্কে হাছান মাহমুদ বলেন, এই খাতে ডিজিটালাইজেশনের পর দেশের গণমাধ্যম ও এর কর্মীদের স্বার্থ নিশ্চিত হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন পদক্ষেপ অনুসরণের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কোনো ধরনের অনিয়ম হলে সরকার ব্যবস্থা নেবে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিদেশের বিভিন্ন চ্যানেলে বাংলাদেশি বিজ্ঞাপন সম্প্রচার বন্ধ হয়েছে। পাশাপাশি কেব্ল অপারেটররা সম্প্রচারের দিনক্ষণ অনুযায়ী বাংলাদেশি টিভি চ্যানেলগুলোর ধারাবাহিকতা বজায় রাখছে। তালিকায় বাংলাদেশি চ্যানেলের পর বিদেশি চ্যানেলগুলোকে রাখা হচ্ছে।
হাছান মাহমুদ বলেন, কোনো কোনো টেলিভিশন চ্যানেল বিদেশি টিভি সিরিজ বাংলায় ডাবিং করে সম্প্রচার করছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই মন্ত্রণালয় ডাবিংকৃত সিরিয়াল সম্প্রচারের জন্য সরকারের অনুমোদন নিতে নির্দেশ দিয়েছে। এ ব্যাপারটি তদারকির জন্য শিগগিরই একটি প্রিভিউ কমিটি গঠন করা হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গণমাধ্যমের উন্নয়নে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। অনেক কোম্পানি বিশেষত মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো বিদেশের দ্বিতীয় গ্রেডের মডেল দিয়ে বিজ্ঞাপন বানাচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশেই আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মডেল ও কলাকুশলী আছে। তাই সরকার বিজ্ঞাপনে বিদেশি শিল্পীদের নিষিদ্ধ ঘোষণার পরিকল্পনা করছে।’
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, সরকার সম্প্রচারমাধ্যমগুলোতে শৃঙ্খলা আনতে গত ছয় মাসে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মন্ত্রী বলেন, সরকার শুধু মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক পরিচালনার জন্য মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোকে লাইসেন্স দিয়েছে। কিন্তু তারা এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ভিডিওর পাশাপাশি বিজ্ঞাপন সৃষ্টি করছে, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুত না করার জন্য বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকেরা তাঁদের টিভি চ্যানেলের জন্য ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছেন।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মোল্লা জালাল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, বিজেসি ট্রাস্টি মোজাম্মেল বাবু, মুন্নী সাহা, মামুনুর রহমান খান এবং বিজেসির চেয়ারম্যান রেজওয়ানুল হক রাজা।